পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি : এবার হাতির পালের গতিবিধি জানতে দলটির দলপতিকে রেডিও কলার পরানোর চিন্তাভাবনা শুরু হল। গত সপ্তাহে জেলা শাসকের অফিসে জেলা প্রশাসন এবং গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের আধিকারিকদের মধ্যে এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে মানুষ-হাতি সংঘাত এড়াতে এবং হাতির পালের গতিবিধি দ্রুত জানতে রেডিও কলার নিয়ে আলোচনা হয়। গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন বলেন, ‘ইতিমধ্যে চাপড়ামারি অভয়ারণ্যের এলিফ্যান্ট করিডরে দশটি হাতির পালের মধ্যে দলপতিকে রেডিও কলার পরিয়ে গতিবিধির খবরাখবর দ্রুত পাওয়া যাচ্ছে। আমরা বন দপ্তরে জেলা প্রশাসনের প্রস্তাব পাঠাচ্ছি। হাতির পালের মধ্যে দলপতিকে কীভাবে রেডিও কলার পরানো যায়, সেই ব্যবস্থা করা হবে।’
সম্প্রতি ডুয়ার্সে চাপড়ামারি অভয়ারণ্যে এলিফ্যান্ট করিডর ব্যবহার করে এমন ১০টি হাতির পালের মহিলা দলপতি হাতিকে রেডিও কলার পরিয়েছে গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগ। ডুয়ার্সে সাধারণত সাতটি এলিফ্যান্ট করিডর দিয়ে হাতির পাল জলদাপাড়া, বক্সা, বৈকুণ্ঠপুর এবং মহানন্দা অভয়ারণ্যের জঙ্গলে চলাচল করে। প্রতিটি হাতির পালে আটটি থেকে দশটি করে হাতি থাকে। কোনও ক্ষেত্রে ১৫-২০টি হাতিও থাকে। মর্দা হাতি ছাড়াও মা এবং শাবক থাকে। তবে প্রতিটি হাতির পালে একজন করে দলপতি থাকে। এবার বন দপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের টার্গেট ওই দলপতিরাই। তাদের রেডিও কলার পরালে ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে হাতির পালের গতিবিধি জানা যাবে। কখন কোন সময়ে দলটি রেললাইনে উঠছে, কখন লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে, সবই জানা যাবে। এতে বন্যপ্রাণ বিভাগের ওয়াইল্ডলাইফ স্কোয়াডগুলি তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে যেতে পারবে। এবং হাতির পালকে জঙ্গলে ফিরিয়ে দিতে পারবে, জানালেন গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন।
ডুয়ার্সে মোরাঘাট, খুট্টিমারি, ডায়না, কলাবাড়ি, পানঝোরা, নিউ গ্লেনকো, চুনাভাটি, মোগলকাটা, গয়েরকাটা, রামশাই ইত্যাদি রুটে হাতির পাল চলাফেরা করে। তারা লোকালয়ে ঢুকে একদিকে জমির ফসল নষ্ট করে, অন্যদিকে ঘরবাড়িরও ক্ষতি করে। মাঝেমধ্যে প্রাণহানিও ঘটে হাতির আক্রমণে।
হাতির পাল লোকালয়ে ঢুকলে স্থানীয় কিউআরটির সদস্য এবং বনকর্মীরা হাতির পালকে জঙ্গলে ফেরান। স্থানীয় স্তরে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে হাতির করিডরের খবরাখবর আদানপ্রদান করা হয়ে থাকে। এবার হাতির পালের মধ্যে কোনও হাতির গলায় রেডিও কলার পরানো থাকলে তাদের গতিবিধিতে নজর রাখতে আরও সুবিধা হবে।
একেকটি রেডিও কলার পরাতে খরচ হবে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা। এই প্রকল্পে আর্থিক বন্দোবস্ত বন দপ্তর নিজে থেকে করবে নাকি জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করবে, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। অতিরিক্ত জেলা শাসক (সাধারণ) ধীমান বাড়ুই বললেন, ‘বন্যপ্রাণ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পুরো বিষয়টি গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগ দেখছে।’ বন দপ্তরে গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাঠানোর পর কী খবর আসে, সেদিকেই তাকিয়ে জেলা প্রশাসন ও গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগ।