শিলিগুড়ি: খবর প্রকাশিত হতেই নিজের ওয়ার্ড পরিদর্শনে বের হলেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার বার্তা দিতে সপার্ষদ বেরিয়েছিলেন তিনি। চড়া রোদে হেঁটেই ঘুরেছেন বিভিন্ন এলাকা। সামনে ছিল প্রচার গাড়ি। পরে অবশ্য তাল কাটে ওয়ার্ডের একাধিক ফাঁকা জমিতে জমা জল চোখে পড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন গৌতম। তাঁর নির্দেশেই জল তুলতে তড়িঘড়ি সেসপুল আনা হয়। যদিও নিজের এলাকাকে ডেঙ্গিপ্রবণ মানতে নারাজ মেয়র। কলকাতা থেকে পতঙ্গবিদরা এসে রিপোর্ট দিয়ে গেলেও ওই এলাকায় বর্তমানে কোনও ডেঙ্গি পজিটিভ রোগী নেই বলে দাবি তাঁর। গৌতমের বক্তব্য, ‘তিন মাস আগে আমার এলাকায় দুটি ডেঙ্গি পজিটিভ কেস ছিল। তাঁরা বর্তমানে সুস্থ। এখন একজনও আক্রান্ত নেই। স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে খোঁজ নিতে পারেন। এছাড়া যেখানে জল জমে থাকছে, সেখানকার মালিকদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছি।’
কলকাতা থেকে পতঙ্গবিদদের একটি দল শিলিগুড়িতে এসে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে একটি রিপোর্ট দিয়েছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, শহরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ডেঙ্গিপ্রবণ। তালিকায় ৪৬, ৩৫, ৩৩, ৭ সহ একাধিক ওয়ার্ড রয়েছে। ‘ডেঙ্গিপ্রবণ’ ওয়ার্ডগুলির মধ্যে মেয়রের ওয়ার্ডের একাধিক এলাকায় জল জমে রয়েছে বলে অভিযোগ। বুধবারও জায়গায় জায়গায় জল দেখা গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি নিয়ে উত্তরবঙ্গ সংবাদে প্রতিবেদন প্রকাশিত হতেই পরিদর্শনে যান গৌতম দেব। তাঁর কাউন্সিলার কার্যালয় থেকে একটি সচেতনতা যাত্রা শুরু হয়। সেখানে ভিসিটি (ভেক্টর কন্ট্রোল টিম)-র সদস্যদের পাশাপাশি ওয়ার্ড কমিটির সদস্যরা, পুরনিগমের জঞ্জাল অপসারণ ও স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ যথাক্রমে মানিক দে এবং দুলাল দত্ত ছিলেন। তাছাড়া ছিলেন পুরনিগমের বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিক, হেলথ অফিসার, বাস্তুকাররা।
যাত্রাপথেই সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি লিফলেট বিলি করা হচ্ছিল। হাঁটতে হাঁটতে মেয়র দুই জায়গায় জমা জল দেখতে পান। দুটিই ফাঁকা জায়গা। একটিতে বাড়ি নির্মাণ করার উদ্দেশ্যে মিস্ত্রিরা এসেছিলেন তখন, অপরটি প্রোমোটার সদ্য নিয়েছেন বলে জানা যায়। প্রথম ক্ষেত্রে বাড়ির মালিককে দ্রুত জমা জল সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গেই স্প্রে করা হয় মশা মারার তেল।
পরের ফাঁকা জমিটি পাইপলাইনে তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয় থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে অবস্থিত। সেখানে বুধবার যে পরিমাণ জল জমে ছিল, এদিন তার দ্বিগুণ জল জমে ছিল। ওই এলাকায় একটি কুয়োও উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে। অভিযোগ, চলতি মাসের ৯ তারিখ থেকে ওই এলাকায় জল জমে। সূত্রের খবর, ভিসিটি টিমের কর্মীরা ওয়ার্ড কমিটির কার্যালয়ে আগেই জানিয়েছিলেন বিষয়টি। অথচ কেউ গুরুত্ব দেননি। সাধারণত, সাতদিন কোথাও পরিষ্কার জল জমে থাকলে সেখানে ডেঙ্গির লার্ভা জন্ম নেয়। তারপরও কেন এতদিন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মেয়রও বিরক্তি প্রকাশ করেন। তড়িঘড়ি সেসপুলের সাহায্যে জমি থেকে জল তোলা হয়।
এদিন মেয়রকে কাছে পেয়ে আবর্জনা নিয়েও অভিযোগ জানান স্থানীয় সীমা দাস, শিল্পা দাসরা। তাঁদের দাবি, ‘তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে এলাকার সমস্ত আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এমনকি মাছ বাজারের জঞ্জালও সেখানে ফেলায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েও অবস্থা বদলায়নি।’ সবকিছু শোনার পর ওই এলাকায় বাজারের আবর্জনা ফেলতে নিষেধ করে দেন মেয়র।