ইসলামপুর: ইসলামপুর ইলুয়াবাড়ি শিল্পতালুক যেন রূপকথা গল্পের সেই ‘কুমিরছানা।’ একাধিক ব্যবসায়ী জমি বাবদ সবমিলিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করলেও এখনও শিল্পতালুকের ভিতরের পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং জমির প্লটিং করা হয়নি বলে ক্ষুব্ধ ইলুয়াবাড়ি ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্টেট ডেভলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক শংকর কুন্ডু বলছেন, ‘শিল্পকেন্দ্রে কচ্ছপের গতিতে চলা কাজকর্ম নিয়ে আমরা হতাশ। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা আমরা দিলেও শিল্পের পরিবেশ তৈরি হয়নি।’ একই সুরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ফেডারেশন অফ ইসলামপুর ট্রেডার্স অর্গানাইজেশনের (ফিটো) সাধারণ সম্পাদক সুভাষ চক্রবর্তী। যদিও রাজ্যের স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড শিল্প উদ্যোগীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। করপোরেশনের রাজের এসিস্টেন্ট ম্যানেজার সুদীপ কুমার পাল বলছেন, ‘আমাদের দিক থেকে কোনও খামতি নেই। যারা জমি নিয়ে ব্যবসা করতে চান তাদের বড় অংশই সরকারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বিলম্ব করছেন।’
ইসলামপুর শিল্পতালুক বাম আমলে একবার উদ্বোধন করা হয়েছিল। তৃণমূল সরকারের আমলেও নীল-সাদা রং করে দ্বিতীয়বার ফের উদ্বোধন করা হয়। দুই আমলের নেতারাই এলাকার শিল্পের পরিবেশ এর ফলে অন্যমাত্রা পাবে বলে বারবার দাবি করেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইলুয়াবাড়ির বাসিন্দারাই বলেছেন। কিন্তু আগাছা ও জঙ্গলে সাপখোপের বাসা ছাড়া শিল্পতালুকে গত দেড় দশকে কাজের কাজ কিছু হয়নি। সেলফ হেল্প গ্রুপের সদস্যদের এক সময় তালুকের ভিতরে ব্যবসা করার জন্য কিছু স্টল দেওয়া হয়েছিল। যদিও খরিদ্দারের অভাবে সেই স্টলগুলিও বর্তমানে বন্ধ। রাজ্য এবং উত্তর দিনাজপুর জেলা শিল্পকেন্দ্রের আধিকারিকদের উদ্যোগে তালুকের জমি জট গত বছর অনেকাংশেই কেটে যায়। তারপর থেকেই এলাকার ব্যবসায়ীদের অনেকেই তালুকের ভিতরে জমির জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা লগ্নি করতে শুরু করেন। জমির পরিমাণ অনুসারে কেউ ২৫ লক্ষ, কেউ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সরকারের ঘরে জমা করেছেন বলে সংগঠন সূত্রেই জানা গিয়েছে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শংকর বলেন, ‘ভেবেছিলাম এবার হয়ত জট কাটবে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ভূমিকা নিয়ে আমরা রীতিমত হতাশ। জমির টাকা নির্ধারিত সময়ে জমা না করতে পারলে আমাদের ১২ শতাংশ সুদের শর্ত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পরও আমাদের পরিকাঠামো গড়ে দেওয়া হয়নি। সেই টাকার সুদ কে দেবে? জানিনা আমাদের ভবিষ্যৎ কি হবে।’
ফিটোর সাধারণ সম্পাদক সুভাষ বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট দপ্তর যে গতিতে কাজ শুরু করেছিল তাতে আমরা ভেবেছিলাম এবার তালুকে শিল্প গড়ে উঠবে। কিন্তু বর্তমান চিত্র অন্য কথা বলছে। জমির হস্তান্তর, প্লটিং এবং তালুকের ভিতরে পরিকাঠামো না গড়া হলে আমরা আর কোনও অর্থ জমা করব না। শিল্পের নামে ছেলেখেলা কাম্য নয়।’ কর্পোরেশনের অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজারের প্রতিক্রিয়া, ‘যারা জমির লিজ ডিড পেয়েছেন তারা জমির রেজিস্ট্রি করাচ্ছেন না কেন? সরকারি পদ্ধতির বাইরে তো কিছু করা সম্ভব নয়। ফলে আমাদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ সঠিক নয়।’