সিঙ্গাপুর: চিনের ডিং লিরেনকে হারিয়ে ডোম্মারাজু গুকেশ কনিষ্ঠতম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। শেষ রাউন্ডে লিরেনের ভুল কাজে লাগিয়ে ম্যাচ ও খেতাব নিশ্চিত করেন তিনি। তারপর বোর্ডে বসেই কেঁদে ফেলেন চেন্নাইয়ের তরুণ। একই অবস্থা হয়েছিল মা জে পদ্মকুমারীর। তিনি এতটাই উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত ছিলেন যে সারাদিন ফোন বা কম্পিউটারে হাত পর্যন্ত দেননি। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তিনি ছেলের জয়ের খবর পান গুকেশের কাকিমার থেকে। পদ্মকুমারীর মন্তব্য, ‘প্রথমে আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। কান্না থামাতে ১০ মিনিটেরও বেশি সময় লেগেছিল।’ পদ্মকুমারী একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট। গুকেশের বাবা নাক, কান ও গলার ডাক্তার। তবে দেশবিদেশে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ছেলের সঙ্গে থাকার জন্য তিনি কেরিয়ার বিসর্জন দিয়েছেন। অর্থাৎ পদ্মকুমারীর রোজগারেই চলে পরিবারের সমস্ত খরচ। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের মুহূর্ত। যা একই সঙ্গে মনে করিয়ে দেয় কঠিন সময়ের কথাও। বিশেষ করে গুকেশের বাবার পরিশ্রম।’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নরওয়ের ম্যাগনাস কার্লসেনের সঙ্গে ম্যাচ খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন গুকেশ। তাঁর মন্তব্য, ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেও এক নম্বর অবশ্যই কার্লসেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যাগনাসের বিরুদ্ধে খেলতে পারলে দারুণ হবে। সবটাই নির্ভর করছে ম্যাগনাসের উপর।’ গুকেশের এই প্রস্তাব অবশ্য নাকচ করে দিয়েছেন কার্লসেন। তাঁর কথায়, ‘এই সার্কাসে আমি নেই।’
২০১৩ সালে বিশ্বনাথন আনন্দকে হারিয়ে কার্লসেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। ১০ বছর খেতাব ধরে রাখার পর ২০২৩ সালে তিনি প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান। তখনই রাশিয়ার ইয়ান নেপোমনিয়াচ্চির সঙ্গে খেতাবের লড়াইয়ে নামার সুযোগ পান লিরেন।
গোটা বিশ্ব মজলেও গুকেশের এই অনন্য কীর্তি মেনে নিতে পারছেন না রাশিয়ার দাবা সংস্থার প্রধান আন্দ্রেই ফিলতভ। তাঁর মতে লিরেন ইচ্ছে করে হেরে গিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের এই ফল দাবাপ্রেমীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। নির্ণায়ক মুহূর্তে চিনের দাবাড়ুর এমন ভুল সন্দেহজনক। আন্তর্জাতিক দাবা সংস্থার উচিত আলাদা করে তদন্ত করা।’ সঙ্গে আরও যোগ করেছেন, ‘প্রথম শ্রেণির দাবাড়ুদের পক্ষেও এমন ভুল করা কঠিন। মনে হল ইচ্ছাকৃত।’ অন্যদিকে রাশিয়ার প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভ্লাদিমির ক্রামনিক এক্সে (টুইটার) লিখেছেন, ‘আমাদের চেনা দাবার মৃত্যু ঘটল।’ সেই সঙ্গে তিনি লিরেনের ভুলকে ‘শিশুসুলভ’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এই সমালোচনার মধ্যে গুকেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর আদর্শ বিশ্বনাথন আনন্দ। তিনি বলেছেন, ‘সমালোচনা সব ম্যাচের পরই হয়। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তোমার সমালোচনা হবে না, এটা আশা কোরো না। এসব পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’