হলদিবাড়ি: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি গিয়েছে। ৩১ ডিসেম্বরের পর আর স্কুলে ক্লাস হবে কি না সন্দেহ। তাই মাধ্যমিক পাশ করার পর নিজের স্কুলের উপর আর ভরসা করতে পারছে না পড়ুয়াদের একাংশ। অন্য স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি) পেতে হলদিবাড়ি গার্লস হাইস্কুলে ভিড় করছেন অভিভাবকরা। অভিভাবকদের অভিযোগ, টিসি দিতে গড়িমসি করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। পড়ুয়াদের নিজের ইচ্ছেমতো যে কোনও স্কুলে ভর্তি হওয়ার অধিকার রয়েছে। তারপরেও পড়ুয়াদের আটকাতে স্কুল কর্তৃপক্ষ এমনটা করছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। এতেই ক্ষুব্ধ তাঁরা। যদিও অভিযোগ ঠিক নয়, এমনটাই দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। তাদের ধারণা, স্কুল সংক্রান্ত বিষয়ে অভিভাবকদের বিভ্রান্তি ও ভুল তথ্যের জন্যই পড়ুয়াদের অন্যত্র নিয়ে যেতে অভিভাবকরা ভিড় করছেন। ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দিতেও তাদের কোনও আপত্তি নেই।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজ্ঞান ও ভূগোল বিষয়ে পড়ার জন্যই মূলত টিসি চাইছেন অভিভাবকরা। এক অভিভাবক চন্দন সরকারের অভিযোগ, ‘মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করায় মেয়ে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে হলদিবাড়ি গার্লস স্কুলের মোট আটজন শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন শিক্ষিকা ছিলেন বিজ্ঞান বিভাগের। বর্তমানে বিজ্ঞান বিভাগ পড়ানোর মতো শিক্ষিকা নেই। তাছাড়া স্কুলের ল্যাবরেটরিও উন্নত নয়। তাই মেয়ে হলদিবাড়ি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। কিন্তু গার্লস স্কুল থেকে সমস্যা তৈরি করছে।’ একই অভিযোগ করেন নীরেন রায়, মিনু খাতুনের মতো অভিভাবকরা।
হলদিবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক স্বর্ণকমল রায় জানিয়েছেন, পড়ুয়ারা নিজের পছন্দমতো যে কোনও স্কুলে ভর্তি হতে পারে। তবে তার জন্য আগের স্কুলের টিসি বাধ্যতামূলক।
হলদিবাড়ি গার্লস হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি পূরবী চক্রবর্তীর মতে, অভিভাবকরা সঠিক তথ্য না জেনে বিভ্রান্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যে ১১ জন নতুন শিক্ষিকা এই স্কুলে কাজে যোগদান করেছেন। তাঁদের মধ্যে অঙ্কের চারজন ও বায়োসায়েন্সের একজন শিক্ষিকা রয়েছেন। তাঁরা সকলেই দক্ষ। এছাড়াও চাকরিহারা শিক্ষিকারা ডিসেম্বর অবধি ক্লাস নিতে পারবেন। কোনও কারণে সেসব পদ খালি হলে তাতে আবার নিয়োগ হবে।
স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী দীপান্বিতা সিংহ রায় বলে, ‘২০২৪ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেখলিগঞ্জ মহকুমায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করি। বর্তমানে নিজের স্কুলেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছি। বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার জন্য স্কুলে উপযুক্ত শিক্ষিকা ও পরিকাঠামো রয়েছে।’
হলদিবাড়ি গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ঈশিতা দেবসিংহ জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের প্রাপ্ত নম্বর পোর্টালে আপলোড করার পর পড়ুয়াদের টিসি সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষিকা রয়েছেন। পাশাপাশি পড়ুয়ারা ল্যাব ব্যবহার করার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পায়। অভিভাবকরা অযথা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।