স্বপনকুমার চক্রবর্তী, বামনগোলা: একসময়ে হাতে ভাজা গরম গরম মুড়ির স্বাদই ছিল যেন আলাদা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্য হারিয়েছে হাতে ভাজা মুড়ি। মা, ঠাকুরমার সেই হাতে ভাজা মুড়ির দিন আর নেই। সেখানে জায়গা করে নিয়েছে মিলে ভাজা মুড়ি। অল্প সময়েই বেশি পরিমাণে মিলছে মিলে ভাজা মুড়ি। ফলে একসময়ের হাতে ভাজা মুড়ির স্বাদ থেকে বঞ্চিত নতুন প্রজন্মকে মিলে ভাজা মুড়ির স্বাদ নিয়েই খুশি থাকতে হচ্ছে। কিন্তু মেশিনে তৈরি মুড়ির দাপটে হাতে ভাজা মুড়ির ঐতিহ্য হারানো নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই অনেকেরই। তাঁদের মতে আধুনিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের ছোঁয়া নিয়ে এসেছে এই মিলে ভাজা মুড়ি। পরিবর্তনের যে প্রভাব পড়ছে হাতে ভাজা মুড়ি কারিগরদের জীবনে।
বিভিন্ন উৎসবে যেমন মুড়ির সঙ্গে মুড়ির তৈরি মোয়া, মুড়কি, মুড়ির ছাতু সহ বিভিন্ন উপাদেয় খাবার জনপ্রিয়। তেমনই রমজান মাসে দিন শেষে ইফতারে খাবারের তালিকায় বিভিন্ন কিছুর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খাবার এই মুড়ি। তাই দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজন ছাড়াও এই ধরনের উৎসব বা অনুষ্ঠান এলে মুড়ির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। মুড়িপ্রেমীদের মতে, হাতে ভাজা মুড়ির স্বাদই আলাদা। কিন্তু মেশিনে তৈরি মুড়ির দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে হাতে ভাজা মুড়ির স্বাদ ও ঐতিহ্য।
ফলে আধুনিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের ছোঁয়া বামনগোলার (Bamangola) বিভিন্ন গ্রামেগঞ্জে। বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী হাতে ভাজা মুড়ি। একসময় বামনগোলার বিভিন্ন এলাকায় হাতে মুড়ি ভাজার কাজ করতেন অনেক পরিবার। কিন্তু এখন মাত্র হাতেগোনা কিছু পরিবার মুড়ি ভাজার কাজ করেন। অন্য পরিবারগুলোর মেশিনে ভাজা মুড়ির দাপটে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে না পেরে বদলে নিয়েছেন নিজেদের পেশা।
মুড়ি ভাজার কাজে যুক্ত বাসন্তী রায় জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই আমরা পরিবারে হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করতাম। তখন এই মুড়ির অনেক চাহিদা ছিল। রাতদিন ভেজেও চাহিদা শেষ করতে পারা যেত না। কিন্তু বাজারে মুড়ি ভাজার মেশিন আসার পর থেকে ধীরে ধীরে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা কমতে শুরু করেছে। হাতেগোনা কিছু পরিবার ছাড়া এখন আর কেউ এই কাজ করেন না। বাধ্য হয়েই হাতে মুড়ি ভাজার পেশা বদলে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন।’
অনিলা ভুঁইমালি নামে একজন বলেন, ‘হাতে ভাজা মুড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরদের কথা যদি না ভাবা হয়, তাহলে হয়তো এক সময় পুরোপুরিই হারিয়ে যাবে এই হাতে ভাজা মুড়ি ভাজার শিল্প। আগামী প্রজন্ম যেমন বঞ্চিত হবে ঐতিহ্যবাহী হাতে ভাজা মুড়ির স্বাদ থেকে। তেমনই হাতে ভাজা মুড়ি শিল্পে যুক্ত পরিবারগুলোও আগ্রহ হারাবে এই কাজ থেকে। তাই অনুদানযুক্ত স্বল্প সুদে ঋণ সহ হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রির নিশ্চয়তাই বাঁচিয়ে রাখতে পারে এই মুড়ি শিল্পকে।’