কল্লোল মজুমদার ও সৌরভকুমার মিশ্র, মালদা ও হরিশ্চন্দ্রপুর: টানা ৭ দিন পর অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে হরিশ্চন্দ্রপুরের (Harishchandrapur) ১৯ পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবার। সোমবার মালদা (Malda) জেলা প্রশাসনের তরফে ওডিশায় আটকে থাকা শ্রমিকদের ভারতীয় নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র ওই রাজ্যের প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়। এদিন বিকেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মালদার জেলা শাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের তরফে ওডিশা প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় নথি পাঠানো হয়েছে। আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন।’
মালদা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক ভিনরাজ্যে কাজ করতে যান। সেই সংখ্যাটা প্রায় ১০ লক্ষের কাছাকাছি। কিছুদিন আগে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার মশালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের তালগাছি, ভৈরবপুর, মোহনপুর সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের কিছু শ্রমিক ওডিশায় গিয়েছিলেন। কিন্তু ৭ দিন আগে হঠাৎই তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে আটক করা হয়। যদিও কয়েকজন পালিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু ধরা পড়ে যান ১৯ জন শ্রমিক। অভিযোগ, জেল হেপাজতে না রেখে সংশোধনাগারের পাশে একটি পরিত্যক্ত সরকারি আবাসনে থাকতে দেওয়া হয় তাঁদের। সিটুর জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি সিনহার দাবি, ‘ওই বাড়িটি কার্যত অলিখিত ডিটেনশন ক্যাম্প। আমাদের প্রশ্ন, কেন পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় শ্রমিকদের প্রতি এই অবিচার? ওডিশায় আমাদের সংগঠনের তরফে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে দেখা করে আটকে রাখা শ্রমিকদের মুক্তির দাবি করা হয়েছিল। এব্যাপারে আমাদের দলের নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন।’
এর আগেও হরিশ্চন্দ্রপুর থানার তরফে ওডিশা প্রশাসনের কাছে আটকে থাকা শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় নথি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ওডিশা প্রশাসন সেই নথি মানতে রাজি হয়নি। সোমবার ফের জেলা প্রশাসনের তরফে নতুন করে নথি পাঠানোর পরেই শ্রমিকদের ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয় ওডিশা সরকারের তরফে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রিজিয়া সুলতান বলেন, ‘ওডিশায় আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকে ত্রাণসামগ্রী এবং রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।’ এদিকে, ওই ঘটনার পর বহু শ্রমিক ভয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। অনেকে জিনিসপত্র সেখানেই রেখে এসেছেন। ইতিমধ্যে ১০০ থেকে ১৫০ জন ফিরে এসেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ১৯ জন শ্রমিককে ওডিশাতে মাহঙ্গা এলাকার একটি সরকারি ভবনে রাখা হয়েছিল। ওই জায়গার নাম আটাগড়। ওই ভবন করোনার সময় কোয়ারান্টিন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হত। ফিরে আসা এক শ্রমিক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কটকের অন্য একটি জায়গায় থাকতাম। যখনই আমি এই খবর জানতে পারি যে আমার গ্রামের ১৯ জনকে আটকে থানায় নিয়ে গিয়েছে, আর বিলম্ব করিনি। লুকিয়ে রেলস্টেশনে এসে জেনারেল টিকিট কেটেই ট্রেনে চড়ি। আমার মতো অনেকেই এইভাবে বাড়ি ফিরেছে।’
দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ইশা খান চৌধুরী বলেন, ‘বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বারংবার মালদা ও মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন। হেনস্তার মুখে পড়তে হচ্ছে। এই নিয়ে আমরা আন্দোলনে নামছি।’