উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ‘ফেরার’ ভোলে বাবা। তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ। হাথরসে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় সুরজপাল ওরফে নারায়ণ সাকার হরি ওরফে ভোলে বাবার বিরুদ্ধে সুয়োমোটো মামলা করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এই ঘটনার পর থেকে বাবার নানা কীর্তি সামনে আসতে শুরু করেছে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোলে বাবার বিরুদ্ধে অতীতে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। পাশাপাশি, তাঁর বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে আগরা, এটা, কাসগঞ্জ, ফারুখাবাদ এবং রাজস্থানে। এত কিছুর পরেও বাবার জনপ্রিয়তায় ভাটা পরেনি।
জানা গিয়েছে, স্বঘোষিত এই ধর্মগুরু ভোলে বাবার জন্ম উত্তরপ্রদেশের এটা জেলার পাতিয়ালি পঞ্চায়েতের বাহাদুর নাগরি গ্রামের এক কৃষক পরিবারে। তাঁর আসল নাম সুরজপাল সিং। পড়াশোনা শেষ করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশে যোগ দেন সুরজ। প্রায় ১৮ বছর উত্তরপ্রদেশে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এর হেড কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। ভোলে বাবার অনুগামীদের দাবি, ধর্মীয় বাণী প্রচারের জন্য ১৯৯৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। চাকরি ছেড়ে নিজের নাম পরিবর্তন করে নারায়ণ সাকার হরি রাখেন সুরজ। সুরজপাল হয়ে ওঠেন ভোলে বাবা। এর পরে পরেই শুরু সৎসঙ্গের।
তবে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, পুলিশে চাকরি করার সময় ১৯৯৭ সালে সুরজের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছিল। এই ঘটনার পরেই চাকরি খোয়াতে হয় ভোলে বাবাকে। জেলেও যেতে হয়। জেল থেকে মুক্তির পরেই নাকি নিজেকে ‘সাকার বিশ্ব হরি বাবা’ হিসাবে পরিচয় দিতে শুরু করেন তিনি। পৈতৃক বাড়িতেই আশ্রম খোলেন। হয়ে ওঠেন ভোলে বাবা। দিনে দিনে ভক্তসংখ্যাও বাড়তে থাকে। এখন হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, দিল্লি-সহ গোটা ভারতে অসংখ্য ভক্ত ছড়িয়ে রয়েছে স্বঘোষিত এই ধর্মগুরুর।
এ ছাড়াও করোনাকালে সৎসঙ্গের আয়োজন করে আইনি জটিলতায় নাম জড়ায় ভোলে বাবার। অতিমারির সময় বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে উত্তরপ্রদেশের ফারুখাবাদে একটি সৎসঙ্গের আয়োজন করেছিলেন স্বঘোষিত গুরু। জেলা প্রশাসন শুধুমাত্র ৫০ জনকে সেই সৎসঙ্গে যোগদানের অনুমতি দিলেও জড়ো হয়েছিলেন নাকি ৫০ হাজার মানুষ। এই বিশাল জনসমাগমের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের হয়। সেই ভোলে বাবার নাম এ বার জড়িয়েছে হাথরসকাণ্ডেও।
প্রশাসনের তরফে দাবি করা হচ্ছে, স্বঘোষিত ধর্মগুরুর পদধূলি নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি হতেই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে। পুলিশের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ভক্তরা যখন ভোলেবাবার ‘চরণধূলি’ পাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করেছিল তখন তাঁর ‘সেবাদার’ বা নিরাপত্তারক্ষীরা ধাক্কা দিয়ে ভি়ড় সরাতে শুরু করে। সেই সময়ই অনেকে একে অপরের উপর হুড়মুড়িয়ে পড়েন। বাকিরা তাঁদের উপর দিয়েই চলে যান।
যদিও কেউ কেউ আবার দাবি করেছেন, ভোলে বাবার কনভয় যাওয়ার জন্য পুণ্যার্থীদের আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি চলে যেতেই গেট খুলে দেওয়া হয়, আর হুড়মুড়িয়ে বেরোনোর চেষ্টা করতেই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে। পুণ্যার্থী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে এমন নানা তথ্য উঠে আসছে।