আলিপুরদুয়ার ব্যুরো: লাগাতার বৃষ্টিতে ধস নামল বক্সা পাহাড়ে। শনিবার দুপুরে বক্সা পাহাড়ের দু’জায়গায় ধস নেমেছে। অন্যদিকে, এদিন সকাল থেকে মাকড়াপাড়া চা বাগানে রাজ্য সড়কের ওপর দিয়ে জল বইতে শুরু করে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে চা বাগানটি।
এদিন ভুটান পাহাড় থেকে বিভিন্ন নদী ও ঝোরার মাধ্যমে বৃষ্টির জল নেমে এসে রাস্তার ওপর দিয়ে বইতে থাকে। আটকে পড়ে যানবাহন। কালচিনির বাসরা, কালীঝোরা, পানা নদীতে ফের জল বাড়তে শুরু করেছে। এতে নতুন করে বাসরা ও কালীঝোরা নদীর পাড়ভাঙন শুরু হয়েছে। যদিও আলিপুরদুয়ার শহরের ছবিটা ছিল আলাদা। সকালে আলিপুরদুয়ার শহরে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকা সহ বিজি রোড, দ্বীপচরে কিছুটা জল জমে থাকতে দেখা যায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গেই সেই জল নেমে যায়। দুপুরে বৃষ্টি কমায় স্বস্তি ফেরে শহরে। বৃষ্টি কমায় সন্ধ্যা থেকেই জোরকদমে কাজ চলে বিগ বাজেটের পুজোমণ্ডপগুলোয়। যদিও রাতে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আবার সমস্যা বাড়ে।
দুপুরে বক্সা ফোর্ট যাওয়ার রাস্তার দুই জায়গায় ধস নেমেছে। জিরো পয়েন্ট থেকে ভিউ পয়েন্ট এবং সদর বাজার থেকে দারাগাঁও যাওয়ার রাস্তায় এদিন ধস নামে। দারাগাঁওয়ের কাছে একটি গাছও ভেঙে পড়েছে। বক্সা ফোর্টের বাসিন্দা নিমা ডুকপা এদিন এবিষয়ে বলেন, ‘ধস নামায় যাতায়াতে ভীষণ সমস্যা হচ্ছে। খুব কষ্ট করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। কয়েকজন পর্যটক ছিলেন। তাঁরাও নেমে গিয়েছেন।’ রাজাভাতখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সোনাম ডুকপা জানান, পরিস্থিতির খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। লাগাতার বৃষ্টির জন্যই ওই ধস নামে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকেও সমস্যা কম নেই। জয়বীরপাড়া ও নাংডালা চা বাগানের সীমানা বরাবর প্রবাহিত ডিমডিমা নদীতে সেতু নেই। শনিবার সকাল থেকে ওই নদীতে প্রবল বেগে জলস্রোত বইতে থাকে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে জয়বীরপাড়া, ঢেকলাপাড়া ও বান্দাপানি চা বাগানগুলি। বেলা বারোটা পর্যন্ত পরিস্থিতি বদলায়নি। স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও সমস্যায় পড়েন। জলমগ্ন হয় রহিমপুর চা বাগানের বিভিন্ন এলাকা।
ভুটান পাহাড়ে বৃষ্টির জেরে কালচিনির সেন্ট্রাল ডুয়ার্স চা বাগানে ফের নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে। পানা নদীতে জল বাড়ায় ওই এলাকায় যেতেও সমস্যা হচ্ছে। বাগানের ম্যানেজার শান্তনু বসু জানিয়েছেন, এদিন বাসরা নদীর জল বাগানের বাসরা ডিভিশনের ৭, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর সেকশনে ঢুকে পড়েছে। ওই ডিভিশনের ২ হেক্টর জমি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। কালীঝোরা নদীর ভাঙনে বাগানের হাতিমারা ডিভাশনের ১, ২ ও ৩ নম্বর সেকশনে জমি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। ওই ডিভিশনের প্রায় ১ হেক্টর জমি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে।
জলদাপাড়া হয়ে প্রবাহিত শালকুমারহাটের শিসামারা নদীর জল শনিবার হঠাৎ বেড়ে যায়। নদীর ঘোলা জল এদিন নালার মাধ্যমে নতুনপাড়া গ্রামে ঢুকে পড়ে। অনেকের বাড়ির উঠোন ও রাস্তায় নদীর জল দাঁড়িয়ে যায়। যদিও আলিপুরদুয়ার-১’র বিডিও জয়ন্ত রায় বলেন, ‘শিসামারা নদীর জল কিছুটা বেড়েছে। তবে সেভাবে কারও ঘরে জল ঢোকেনি। জরুরিভিত্তিতে বাসিন্দাদের আশ্রয়ের জন্য লাল্টুরাম হাইস্কুলকে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।’ এদিন নদীর পরিস্থিতি পরিদর্শন করে ফের ভারত-ভুটান যৌথ নদী কমিশনের দাবি তোলেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল।