নকশালবাড়ি: খুলেছে ভারত-নেপাল সীমান্তের মেচির পুরোনো করিডর। ভুট্টার লোভে এ পথেই নেপাল ফেরত হাতি ঢুকল কলাবাড়িতে। গত দু’দিন ধরে তারা আসছে। হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে শুক্রবার থেকেই জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে বন দপ্তর। শুরু হয়েছে গ্রামগঞ্জ, চা বাগানে প্রচার। দপ্তর সূত্রে খবর, গত দু’দিনে নেপাল ও লাগোয়া এলাকা থেকে প্রায় ৭০টিরও বেশি হাতি কলাবাড়ি জঙ্গলে ঢুকেছে। বনকর্মীদের দাবি, সংখ্যাটা শতাধিক। কলাবাড়ি জঙ্গলে হাতি ঢোকায় নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি ব্লকের চাষিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
আসার পথে হাতির দল শুক্রবার রাতেই মেচি লাগোয়া তারাবাড়িতে তিনটি বাড়ি ভাঙে। এতদিন জঙ্গলে হাতি কম থাকায় ধান ও ভুট্টাচাষিরা নিশ্চিন্তে ছিলেন। অধিকাংশ হাতিই নেপালে ছিল। সেগুলি এখন ফের কলাবাড়িতে ফিরছে। বন দপ্তরের অনুমান, হাতির দল ভুট্টা, ধানের লোভে কলাবাড়ি, টুকরিয়াঝাড়, উত্তমচন্দ্র ছাট, ঘোষপুকুর, বাগডোগরার বনাঞ্চলে ফের উপদ্রব শুরু করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে কার্সিয়াং বন বিভাগের পানিঘাটা-কলাবাড়ি বনাঞ্চলের রেঞ্জ অফিসার সমীরণ রাজ বলেন, ‘নেপাল থেকে হাতি কলাবাড়ি জঙ্গলে ঢোকার সময় পথে কিছু বাড়িঘর ভেঙেছে। এখন জঙ্গলে ৭০টির বেশি হাতি রয়েছে। তাই আশপাশে সতর্কতামূলক প্রচার চলছে। এতদিন কম হাতি থাকায় নজরদারি সম্ভব হচ্ছিল। এখন সংখ্যা বাড়ায় তারা নানা দলে ভাগ হয়ে জঙ্গল থেকে গ্রামে হানা দিতে পারে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। কলাবাড়ি জঙ্গলে এলিফ্যান্ট স্কোয়াড টিম রাখা হয়েছে। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতেই প্রচার করা হচ্ছে।’ কিলারামের ভুট্টাচাষি মহম্মদ ইরফান বলেন, ‘শনিবার রাতেই হাতির দল আমার ভুট্টাখেতে ঢুকেছিল। কিন্তু ফসল তেমন নষ্ট না করেই সোজা জঙ্গলে ঢুকে যায়। এজন্য রবিবার সকাল থেকেই ভুট্টা তোলা শুরু করেছি। কারণ, রাতে দল বেঁধে হাতি ঢুকবে।’
সীমান্তে হাতির করিডর খোলায় খুশি পরিবেশপ্রেমীরা। কারণ, নেপালে গত এক বছরে প্রচুর হাতিকে মারা গিয়েছে। স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ‘ঐরাবত’-এর প্রধান অভিযান সাহা বলেন, ‘ভারত-নেপালের মধ্যে হাতির চলাচলের কয়েক দশকের পুরোনো করিডর মেচি-কলাবাড়ি বনাঞ্চল। কিন্তু ২০১৫ থেকে নেপাল এই করিডরে বৈদ্যুতিক ফেন্সিং দেয়। ফলে, পথ বন্ধ হয়। সংগঠন থেকে নানা সময় এটি খুলতে বহু জায়গায় চিঠি দিয়েছি। বারবার রুট বদলে তারা ক্ষিপ্ত।’
ক্ষুব্ধ হাতিরা গত ক’বছর ধরে নেপালে না ঢুকতে পেয়ে শিলিগুড়ি মহকুমায় ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষতি করেছে। করোনা পর্বের পর থেকেই নেপালের বামুনডাঙ্গির ১৮ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক ফেন্সিং অকেজো হয় ও করিডর খুলে যায়। ২০২২-’২৩ সাল থেকে হাতির দল ফের কলাবাড়ি হয়ে পূর্ব নেপালের কোশি অবধি যাতায়াত শুরু করে। শীতে এই হাতিরা কলাবাড়ি হয়ে নেপাল যায়, আর বর্ষার আগে তারা ওই পথেই ফেরে।