কামাখ্যাগুড়ি: রসমালাইয়ের গামলা দিব্যি খোলা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেই গামলার আশপাশে ভনভনিয়ে উড়ছে মাছি। গামলাভর্তি রসমালাই দেখে লোভ লাগার কথা কিন্তু সেই মিষ্টি খেতে গিয়ে আপনার ভয় লাগবে। পেটখারাপ হবে না তো? দৃশ্যটা কামাখ্যাগুড়ি বাজারের ভেতরে এক মিষ্টির দোকানের।
এরকম অবস্থা কেন? কেন স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিচ্ছেন না দোকানের কর্মী বা মালিক? প্রশ্ন ছুড়ে দিতেই শুরু হয়ে গেল হইচই। মিষ্টির দোকানের মালিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির সামনে দোকানের কর্মীদের ডেকে বিষয়টি নিয়ে সচেতন হতে বললেন। এরপর ওই মালিক নিমাই পালের সাফাই, ‘আমরা নিয়মিত পরিষ্কার পরিছন্নতা বজায় রেখেই দোকান চালাই। প্রতিদিনের তৈরি মিষ্টি সেদিনই বিক্রি করি। কিন্তু এদিন দোকানের কর্মীরা ক্রেতাদের মিষ্টি দেওয়ার পর মিষ্টিগুলো ঢেকে রাখতে ভুলে গিয়েছে। তবে এধরনের ঘটনা আমি কখনও বরদাস্ত করি না।’ তাঁরা সবসময় দোকানের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসা করেন বলে জোরদার দাবি করলেন।
নিমাই না হয় দাবিও করলেন, আশ্বাসও দিলেন। কিন্তু বাকিরা? কামাখ্যাগুড়ির পুলিশ ফাঁড়ির উলটোদিকে আরেকটি মিষ্টির দোকানে গিয়ে দেখা গেল, সেখানেও উড়ে বেড়াচ্ছে মাছি। দোকানে পুরির সঙ্গে যে সবজি দেওয়া হয়, তাঁর পাত্র খোলা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। খোলা অবস্থায় রয়েছে দোকানের বিভিন্ন মিষ্টিও। মিষ্টি তৈরির যে রস সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ কয়েকদিনের পুরোনো। সংকীর্ণ জায়গায় দোকানের মাঝখানেই তৈরি করা হয়েছে ডাস্টবিন সেখানেও মাছি উড়ে বেড়াচ্ছে। এবিষয়ে ওই দোকানের মালিক সুবীর দত্তকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর গলায় ঝড়ে পড়ল বিরক্তি। তিনি বললেন, ‘রাস্তাঘাটে যখন খোলামেলাভাবে খিচুড়ি বিতরণ হয়, সেই খিচুড়ি তো সাধারণ মানুষ খান। তখন তো স্বাস্থ্যের প্রশ্ন কেউই তোলে না। আমি যতক্ষণ দোকানে থাকি এভাবেই মিষ্টি রাখি।’ এরপর তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হয় মাছি পড়ে গেলে কী করেন? তিনি নির্দ্ধিধায় জানান, ‘সেই মাছি ফেলে দেওয়া হয়’।
কামাখ্যাগুড়ির বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া একটি প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ভান্ডারের বিরুদ্ধে এর আগেও অস্বাস্থ্যকরভাবে খাবার বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল। মাস ছয়েক আগে মহকুমা শাসক যখন এখানে অভিযানে এসেছিলেন, ওই দোকানদারের মিষ্টি তৈরির কারখানা পরিদর্শন করে রীতিমতো শাসিয়ে গিয়েছিলেন। শহরের বাসিন্দারাই বলছেন, এতকিছুর পরেও হাল ফেরেনি। সেই দোকানের বিরুদ্ধে এখনও গ্রাহকরা খারাপ মিষ্টি এবং দই বিক্রির অভিযোগ এনেছেন।
মহকুমা শাসকের অভিযানের পর অবস্থা শুধরেছিল কয়েকদিনের জন্য। আবার যে কে সেই। আবার কি অভিযান হবে? এবিষয়ে মহকুমা শাসক দেবব্রত রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মিষ্টি ব্যবসায়ীদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে দোকান চালানো উচিত। দোকানে কখনও অনেকদিনের পুরোনো খারাপ মিষ্টি বিক্রি করা উচিত নয়। আমাদের অভিযান যে কোনও সময় হতে পারে। সেসময় বাজারের কোনও দোকানে কোনওরকম ত্রুটিবিচ্যুতি পাওয়া গেলে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।’
এদিকে মিষ্টির দোকানগুলির এই অবস্থায় ক্রেতারা নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে রীতিমতো চিন্তায়। এক ক্রেতা পলাশ দাসের কথায়, ‘অধিকাংশ মিষ্টির দোকানগুলোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যত তলানিতে এসে ঠেকেছে। ব্যবসায়ীদের এবিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’ আরেক ক্রেতা অমিত সাহার মন্তব্য, ‘টাকা দিয়ে যদি খারাপ কিছু কিনতে হয় তা রীতিমতো উদ্বেগের। কারণ এধরনের খারাপ মিষ্টান্ন থেকে রোগব্যাধি ছড়ানোর আশঙ্কা থেকেই যায়।’