সোনাপুর: ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর দুটো। চড়া রোদে চিলাপাতার জঙ্গলে ঘেরা বাজারটাও যেন হাঁসফাঁস করছে। রোদের তেজে হাটে দোকান নিয়ে আসেননি ব্যবসায়ীরা। দুই-একজন এলেও দোকান না খুলে শেডে বসে গা জুড়োচ্ছিলেন। পাশেই কিছু বাঁদর দেখা যাচ্ছিল। কখন হাট বসবে আর এক-দুটো সবজি নিয়ে দৌড় দেবে সেই অপেক্ষায়। তবে সবজি তো দূর মাছের বাজারই তখনও বসেনি। সবজি ব্যবসায়ীরা দূর থেকে এলেও মাছ ব্যবসায়ীরা স্থানীয় আন্দু, বানিয়া, কুর্মাই বনবস্তির।
চিলাপাতার পাশের শিলতোর্ষা, বানিয়া, কালজানি নদী থেকে মাছ ধরে বিক্রি করেন ‘মাছুয়ারা’। সম্প্রতি নাকি ওই বাজারের চিংড়ির চাহিদা বেড়েছে। সেটার মাত্রা এতটাই যে বাজারে মাছের দোকান বসার ১৫ মিনিটের মধ্যেই নাকি সেগুলো বিক্রি হয়ে যায়।
বিষয়টি যাচাই করতে স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন রাভাকে জিজ্ঞেস করতে তিনি সম্মতি দিলেন। তিনি আবার বাতলে দিলেন চিংড়ি দখলের টোটকাও। তাঁর কথায়, ‘বাড়িতে গিয়ে আগে কিনতে হবে। বাজারে ভালো চিংড়ি পাওয়া যাবে না। মাছ বিক্রেতাদের বাড়ি থেকে গিয়ে অনেকে নাকি চিংড়ি কিনছেন।’ হঠাৎ চিংড়ির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়ায় স্থানীয়রা বলছেন এটা, ‘এঁচোড়ের কামাল।’ বর্তমানে বাজারে এঁচোড় উঠতে শুরু করেছে। আর সেটার সঙ্গে চিংড়ির স্বাদ নেওয়ার জন্যই চিলাপাতার চিংড়ির কদর বেড়েছে। তবে শুধু বাজারই নয়, বনবস্তিগুলোতে চিংড়ির চাহিদা বেড়েছে। আন্দুবস্তির মাছ বিক্রেতা শ্যামল রাভার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল মাছ বাছাই করছেন তিনি। শ্যামল ও তাঁর স্ত্রী মিলে ৭ কেজি চিংড়ি মাছ ধরে এনেছেন।
শ্যামল জানালেন, ওই চিংড়ি নিয়ে আর বাজারে যাবেন না আজ। বিষয়টি আরও খোলসা করে বললেন, ‘একজন চিংড়ি অর্ডার দিয়ে গিয়েছেন।’ এখন কি বাড়ি থেকেই বেশি বিক্রি হচ্ছে? এই বিষয়টি জানতে চাওয়ায় রোপা রাভা নামে মাছ ব্যবসায়ীর জবাব, ‘এখন চিংড়ির এত চাহিদা যে অনেকেই বাড়ি এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই ফোন করে রেখে দিতে বলছেন।’ তাঁর আরও সংযোজন, মাঝারি চিংড়ি বাড়ি থেকেই বিক্রি হচ্ছে। কুচো চিংড়ি বাজারে যাচ্ছে। মাঝারি আকারের চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা কেজিতে। কুচো চিংড়ি ২০০ টাকা কেজিতে।
চিংড়ি নাকি জলের পোকা কথাটি হামেশাই শোনা যায়। বিশেষ করে যখন ঘটি আর বাঙালের তর্ক লাগে। তবে চিলাপাতার চিংড়ির চাহিদা সেই তর্ক ভাঙছে। চিলাপাতার বানিয়া নদীতে আগে থেকেই জাল বসিয়ে রাখেন স্থানীয় বনবস্তির অনেক বাসিন্দা। জঙ্গলের মাঝের নদীর কিছু জায়গায় এই মাছ বেশি আটক হয়। সেটা বিক্রি হয় বাজারে। আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকদেরও মুখে উঠেছে এই চিংড়ি।
চিলাপাতায় ঘুরতে আসা কোচবিহারের সোমনাথ সরকারের কথায়, ‘এক মাস আগে চিলাপাতায় ঘুরতে এসে হাট থেকে চিংড়ি কিনেছিলাম। একদম তাজা ছিল। আজকেও ঘুরতে এসে বাজারে ঢুকলাম। তবে আজ আর কেনা হল না। আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে।’