রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি : হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি) নিয়ে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। কিছু সাবধানতা মেনে চললে এর সংক্রমণ থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা যাবে। এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের বক্তব্য, দেখা যাচ্ছে এই ভাইরাসে সংক্রামিতদের অধিকাংশই শিশু। তাই তাদের একটু সাবধানে রাখতে হবে।
উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার তথা মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক বলেছেন, ‘অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জ্বর, সর্দির মতো উপসর্গ দেখা দিলে মাস্ক পরা, বারবার হাত ধোয়া, বেশি ভিড়ে না যাওয়া- এগুলি মেনে চললেই হবে। তাতে গোটা পরিবারই সুরক্ষিত থাকবে।’ দার্জিলিংয়ের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ তুলসী প্রামাণিকের বক্তব্য, ‘হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস নিয়ে সরকারি কোনও অ্যাডভাইজারি আসেনি। আমাদের সমস্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী প্রস্তুত রয়েছেন। যে নির্দেশ আসবে সেইমতো কাজ শুরু করা হবে।’
করোনা ভাইরাস নিয়ে ২০২০-’২১ প্রায় দু’বছর মানুষ আতঙ্কের মধ্যে কাটিয়েছেন। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এইচএমপিভি নিয়ে উদ্বেগে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বেঙ্গালুরুর পর কলকাতায় একটি শিশু এই ভাইরাসে সংক্রামিত হওয়ার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, কলকাতার ঘটনা বেশ কয়েক মাস আগের।
আমজনতাকে আশ্বস্ত করে চিকিৎসকরা বলছেন, এই ভাইরাসে আতঙ্কের কিছু নেই। জ্বর, সর্দি, কাশি, গা হাত-পায়ে ব্যথা, মাথাব্যথার মতো সাধারণ লক্ষ্মণগুলি ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রেও দেখা যায়। এইচএমপিভি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের একটা নতুন স্ট্রেন। চিন সহ বিশ্বের কোনও দেশেই এখনও এই স্ট্রেনের সংক্রমণে মারাত্মক কিছু হয়নি।
উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ অরুণাভ সরকার বলেছেন, ‘আমরা ভিআরডিএলে (ভাইরাস রিসার্চ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি) প্রতি সপ্তাহে ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস (আইএলআই) এবং সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (সারি) পরীক্ষা করি। শুধু মেডিকেল বা কোনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর নমুনাই নয়, গ্রামাঞ্চলে গিয়েও নমুনা নেওয়া হয়। এগুলি পরীক্ষা করে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) পোর্টালে আপলোড করতে হয়। তাতে এখানে ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি ভাইরাস পাওয়া গেলেও হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস পাওয়া যায়নি।’
জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার ডাঃ কল্যাণ খানের বক্তব্য, ‘এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় আমরা যে যে সাবধানতা নিয়েছিলাম সেগুলি এখন থেকে নেওয়া প্রয়োজন। যেমন মাস্ক পরা, ভিড় এড়িয়ে চলা, নিয়মিত হাত ধোয়া ইত্যাদি। তাহলে এই ভাইরাস আমাদের ছুঁতে পারবে না।’ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সঞ্জিতকুমার তেওয়ারি বলছেন, ‘শিশুদের একটু সাবধানে রাখাই ভালো। বাড়িতে কারও সর্দি, জ্বর হলে শিশুকে তাঁর থেকে একটু আলাদা রাখতে হবে। মায়ের দুধ খাওয়ানোর সময় মায়েরও মাস্ক পরে থাকা উচিত। বাচ্চাদের মধ্যে কোনও উপসর্গ দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’