জয়গাঁ: অবশেষে একটি হাসপাতালের দাবি পূরণ হতে চলেছে জয়গাঁবাসীর। জয়গাঁ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে হাসপাতালে উন্নীত করা হবে। এমন আশ্বাস মিলেছে খোদ আলিপুরদুয়ার জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে। ইতিমধ্যেই এব্যাপারে জেলা থেকে রাজ্যের কাছে প্রস্তাব গিয়েছে। স্বাস্থ্য ভবন সেই প্রস্তাবে সিলমোহর দিলেই ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত হবে জয়গাঁ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এই খবরে আপাতত খুশির আবহ জয়গাঁজুড়ে।
ভারত-ভুটান সীমান্ত শহর জয়গাঁতে হাসপাতালের অভাববোধ করেছেন প্রত্যেকে। দলসিংপাড়া থেকে জয়গাঁ পর্যন্ত গোটা এলাকায় কোনও হাসপাতাল নেই। রোগীর পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন, তাঁকে নিয়ে যেতে হয় ৪০ কিলোমিটার দূরে কালচিনির লতাবাড়ি হাসপাতালে। অনেকসময় এত দূরের হাসপাতালে নিয়ে যেতে না যেতেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তাই দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় একটি হাসপাতাল তৈরির দাবি জোরালো হচ্ছিল। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘সীমান্ত শহরে হাসপাতালের অভাব দেখে রাজ্যের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যা সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার সেই অনুযায়ী আগামীতে কাজ হবে।’
দলসিংপাড়া এলাকায় রয়েছে একটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, জয়গাঁ-১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে রয়েছে দুটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। এই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে গর্ভবতীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও শিশুদের পোলিও খাওয়ানো ও টিকা দেওয়া হয়। জয়গাঁ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সব পরিষেবা মেলে, অস্ত্রোপচার ছাড়া। ২০১৭ সালে ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের পরিকাঠামো বানানো হয়েছিল এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিন্তু ২০১৮ সাল থেকেই সেই পরিষেবা বন্ধ করে শুধু আউটডোর পরিষেবা দেওয়ার কাজ চলছে এখানে। চিকিৎসক মাত্র একজন। আর চারজন নার্স রয়েছেন। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পেছনের অংশে চিকিৎসক ও নার্সদের আবাসন তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ এখন আর হচ্ছে না। হাসপাতালের প্রস্তাবে সিলমোহর পড়লে হয়তো সেই কাজও আবার শুরু হবে। বিধানসভায় জয়গাঁর স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে বহুবার সরব হয়েছেন কালচিনির বিধায়ক বিশাল লামা। এখবর শোনার পর তিনি বলেন, ‘জয়গাঁর জন্য রাজ্য সরকার কিছুই ভাবেনি। স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে অনেকদিন বলেছি বিধানসভাতে। যদি ৫০ শয্যার হাসপাতাল হয় তাহলে তো ভালোই।’
বর্তমানে দুপুর দুটোর পর বন্ধ হয়ে যায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আশপাশে নানা সময়ে বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগও উঠেছে। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক নার্স বলেন, ‘জয়গাঁতে একটি হাসপাতালের অভাববোধ সকলেই করেন। এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগে ভালো পরিকাঠামো ছিল। কিন্তু এখন সমস্যা আছে। এলাকায় সমাজবিরোধীদের উপদ্রব। যার কারণে আউটডোর পরিষেবা দিতে হচ্ছে।’ তাই হাসপাতাল পরিষেবা শুরু করার আগে সেখানকার মহিলা কর্মীরা একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি তুলেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নবীন ছেত্রী বলেন, ‘এই হাসপাতাল হলে এলাকার কেউ রাতবিরেতে অসুস্থ হলে তাঁকে নিয়ে উদ্বেগ কমবে। আমরা পুরোপুরি ভরসা করি লতাবাড়ি হাসপাতালের ওপর। এখান থেকে কালচিনি তো আর কম দূর নয়।’ বিমল সাহা নামে আরেক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ‘অনেক পর্যটক জয়গাঁয় আসেন। তাঁদের মধ্যে কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তিনিও তো চিকিৎসা পাবেন।’ ৫০ শয্যার হাসপাতাল চালু হলে সেখানে অপারেশনের পরিষেবা চালু করার দাবিও তুলেছেন এলাকাবাসী।