দিনহাটা: ২০২৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা ভোট। ওই ভোটের কথা মাথায় রেখে কোচবিহার জেলার দিনহাটা বিধানসভায় ঘর গোছানোর কাজ শুরু করে দিলেন এলাকার বিধায়ক তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। ১৩ জানুয়ারি দিনহাটার নয়ারহাট এলাকায় তিনি বিধানসভাভিত্তিক কর্মীসভার ডাক দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে মন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই সভায় জেলা নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
জেলায় উদয়নের ঘোর বিরোধী বলে পরিচিত জেলা পরিষদ সদস্য মির হুমায়ুন কবীরের গড় এই নয়ারহাট এলাকা। এখানেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, উদয়ন সভার জন্য কেন নয়ারহাট এলাকাকেই বেছে নিলেন? উদয়ন এবিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করে বলেন, ‘ওই সভায় জেলা নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বিধানসভা ভোটের জন্য ওই সভায় কর্মীদের বার্তা দেওয়া হবে। এছাড়াও এখন থেকে ভোটের প্রস্তুতি নিতে হবে, সংগঠন মজবুতও করতে হবে।’
এক সময়ের জেলার ফরওয়ার্ড ব্লকের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা প্রয়াত কমল গুহের ছেলে উদয়ন ২০১৫ সালে ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। উদয়ন তৃণমূলে আসার আগে দিনহাটা-২ ব্লকের শেষ কথা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ঘনিষ্ঠ হুমায়ুন। উদয়ন তৃণমূলে আসার পর ক্ষমতা কমতে থাকে হুমায়ুনের। বিভিন্ন সময় ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে দুই নেতার অনুগামীরা বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। অন্যদিকে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন হুমায়ুন। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে হুমায়ুন জেলা পরিষদ আসনে জয়ী হলেও কোনও কমাধ্যক্ষের পদ পায়নি। হুমায়ুনের স্ত্রী মমতাজ বেগম পঞ্চায়েত সমিতির আসনে জয়ী হয়ে সভাপতির দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও পরে তাঁকে সভাপতি করা হয়নি। এজন্য সেসময় উদয়নের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন মমতাজ।
এসবের মধ্যে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলার অভিযোগ ওঠে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে। মাসদুয়েক আগে এই ঘটনাকে ঘিরে শোরগোল ছড়ায় এলাকায় এতে আরও বিপাকে পড়েন নয়ারহাটের ওই তৃণমূল নেতা। এই সভা নিয়ে হুমায়ুন বলেন, ‘আমি কোনও সভার কথা জানি না। এখনও আমাকে কেউ কিছু বলেনি।’
এসবের মধ্যে নয়ারহাট এলাকায় কর্মীসভার ডাক দিয়েছেন উদয়ন। বিধানসভার বিভিন্ন এলাকা থাকতে কেন হিমুর গড় নয়ারহাটকে সভার জন্য বেছে নেওয়া হল? এ প্রশ্নের উত্তরে রাজনৈতিক মহলের ধারণা জেলা তৃণমূলে উদয়ন, অভিজিৎ ও জগদীশ গোষ্ঠীর পালটা হিসাবে রবি ও পার্থর একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। এদিকে, আবার হুমায়ুন রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ঘনিষ্ঠ। ফলে হুমায়ুনের ওপর একটা চাপ তৈরি করে রবীন্দ্রনাথকে বার্তা দিতে নয়ারহাট এলাকাকে সভার স্থান হিসাবে বেছে নিয়েছে উদয়ন গোষ্ঠী। গোটা বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।