উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্টি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘বেরিল’। বেরিল ক্রমশ ধেয়ে আসছে দক্ষিণ-পূর্ব ক্যারিবীও অঞ্চলের দিকে। ক্যাটেগরি ৪-এ পৌঁছে গিয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। যা অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এটি ঘণ্টায় ১৭৯ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায়।
হারিকেন বেরিল আরও শক্তিশালী হওয়ায় ক্যারিবিয়ানের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সতর্ক করে বলেছেন, এটি শিগগির একটি বড় ঝড়ে পরিণত হবে। ইউএস ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) বলেছে, বেরিল বর্তমানে বারবাডোসের প্রায় ৫৩০ মাইল (৮৫০ কিলোমিটার) পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থান করছে। সোমবার সকালে যখন এটি উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হানবে তখন এটি ‘বড় ধরনের বিপজ্জনক ঝড়’ হয়ে আসবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এনএইচসি সতর্ক বার্তায় বলেছে, ঝড়টি ‘শক্তিশালী হয়ে উঠছে’। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে আঘাত হানার সময় এটি আরও বিপজ্জনক রূপ নেবে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এই ঝড়ের সতর্কতা, টোবাগো ও ডোমিনিকান রিপাবলিকে কার্যকর করা হয়, তখন বারবাডোস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট, গ্রেনাডাইনস ও গ্রেনাডা এলাকায়ও হারিকেনের সতর্কতা জারি করা হয়।
জানা গিয়েছে, এই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় বেরিল আঘাত হানার আশঙ্কায় বার্বাডোজের রাজধানী ব্রিজটাউনের গ্যাস স্টেশনগুলোয় সারিবদ্ধভাবে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সুপার মার্কেট এবং মুদিদোকানে খাবার, জল ও অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার মানুষজনকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সূত্রে খবর। বেরিলের প্রভাব রাত থেকেই পড়তে শুরু করেছে। ঘণ্টায় প্রায় ৯০ মাইল বেগে বইছে দমকা হাওয়া। এর প্রভাবে ভারী বৃষ্টি, বন্যা এবং ঝড়ের সতর্কতা রয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে সাত ফুট পর্যন্ত জলস্তর বাড়াতে পারে। কিছু এলাকায় বাতাসের গতিবেগ পূর্বাভাসের চেয়েও ৩০ শতাংশ বেশি শক্তিশালী হতে পারে।
ইউএস ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের (এনএইচসি) বরাতে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার (১ জুলাই) এই ঘূর্ণিঝড়টি ক্যারিবীয় দ্বীপে ভয়াবহ তাণ্ডব চালাতে পারে। ঘূর্ণিঝড় বেরিল বার্বাডোজ, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট, গ্রেনাডাইনস, গ্রেনাডা, মার্টিনিক, টোবাগো ও ডোমিনিকাসহ গোটা ক্যারিবীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। এরই মধ্যে এসব দেশে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রোববার রাত স্থানীয় সময় ৮টা পর্যন্ত বেরিল বার্বাডোজের প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল এবং ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩০ মাইল বেগে দমকা বাতাস বইছিল ও ১৮ মাইল প্রতি ঘণ্টায় এটি পশ্চিমে চলছিল।
ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের কাছাকাছি বড় এবং ধ্বংসাত্মক ঢেউ নিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছে এনএইচসি। তাঁদের পূর্বাভাস, ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ এলাকায় যেখানে মূল অংশটি আছড়ে পড়বে, সেখানে এবং তার কাছাকাছি উপকূলীয় অঞ্চলে ৬ থেকে ৯ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের ডিরেক্টর মাইক ব্রেনান সিএনএনকে বলেন, “আমরা দ্রুত তীব্রতা (ঝড়ের) বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিচ্ছি এবং বার্বাডোজ ও উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের মতো জায়গায় পৌঁছানোর আগে বেরিল একটি বড় হারিকেন হয়ে উঠবে। এছাড়া পূর্ব ও মধ্য ক্যারিবীয় অঞ্চলে অগ্রসর হওয়ার পরও এটি শক্তিশালী থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’ ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতাসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের ঝড়ের ‘বড় প্রভাবের’ জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শও দিয়েছেন ব্রেনান।