মুরতুজ আলম,সামসী: পণের দাবিতে এক গৃহবধূর মুখে বিষ ঢেলে প্রাণে মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠল স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকের বিরুদ্ধে। ঘটনায় ওই গৃহবধূ তাঁর স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে চাঁচল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্ত স্বামী রবিউল আলমকে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতকে শনিবার চাঁচল মহকুমা আদালতে তোলা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চাঁচল-২ ব্লকের চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বলরামপুর গ্রামের মেয়ে মনোয়ারা খাতুনের সাথে তিন বছর আগে সামাজিকভাবে বিয়ে হয় উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার থানার ছিনিমপুর গ্রামের বাসিন্দা রবিউল আলমের।বিয়েতে ছেলের পরিবারের দাবি মতো এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা,কয়েক ভরি সোনার অলংকার, ঘর ভর্তি কাঠের আসবাবপত্র ও একটি বাইক দেওয়া হয়েছিল।
মনোয়ারার অভিযোগ, বিয়ের কিছুদিন পর থেকে অতিরিক্ত আরও পাঁচ লক্ষ টাকা বাবার বাড়ি থেকে আনার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া শুরু করে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে না পারায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে তাঁর ওপর। তার স্বামী পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে বাইরে থাকায় সেই সুযোগে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ওপর শারীরিক অত্যাচারের মাত্রা বহুগুণ বৃদ্ধি করে । গত শনিবার অর্থাৎ ২১ জুন শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার মুখে কীটনাশক বিষ ঢেলে প্রাণে মারার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। এরপর তার চিৎকারে পাড়ার লোক ছুটে এসে তাকে চিকিৎসার জন্য ইটাহার হাসপাতালে নিয়ে যান। তার শারীরিক অবস্থা বেগতিক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে রেফার করেন রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে। খবর পেয়ে স্বামী রবিউল আলম ভিনরাজ্য থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে থেকে মঙ্গলবার ছুটি পেয়ে স্বামীর বাড়িতেই এসে ওঠেন মনোয়ারা খাতুন। কিন্তু সেই সময় শ্বশুর শাশুড়ি তার বাবা মাকে সালিশির নামে সেখানে ডেকে পাঠায়। তাঁর মা সেখানে গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তার মাকেও মারধর করে বলে অভিযোগ।
এরপর মনোয়ারা বাবার বাড়িতে চলে এলে তাঁর স্বামী লোকজন নিয়ে গিয়ে সেখানেও স্ত্রীকে মারধর করে বলে জানিয়েছে মনোয়ারা। এমনকি শুক্রবার তাঁর এক বছর আট মাসের অসুস্থ কন্যা সন্তানকে নিয়ে গালিমপুরে ডাক্তার দেখাতে গেলে সেখানেও স্বামী রবিউল আলম ও আরও দুই দুষ্কৃতী মিলে মনোয়ারাকে বেদম মারধর করে। এরপরেই সুবিচারের দাবিতে মনোয়ারা খাতুন স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে চাঁচল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ মূল অভিযুক্ত স্বামী রবিউল আলমকে গ্রেপ্তার করেছে।
এই বিষয়ে মনোয়ারা খাতুনের বক্তব্য, ‘বাবা খুব গরিব। অতিরিক্ত পাঁচ লক্ষ টাকা কীভাবে দেবেন। টাকা না দেওয়ায় আমাকে প্রানে ফেলার চেষ্টা করে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন।’ এসডিপিও সোমনাথ সাহা জানান, অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ওই গৃহবধূর স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে।বাকি অভিযুক্তরা পলাতক।অভিযুক্তদের খোঁজে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে।