কল্লোল মজুমদার,মালদা: চার বছরের ছেলের সামনে মাকে গলা টিপে খুন করল মদ্যপ বাবা। গ্রামবাসী ও পুলিশের কাছে ওই শিশু মায়ের খুনের ঘটনা বর্ণনা করেছে। আর তারপর অবস্থা বেগতিক দেখে গা ঢাকা দেয় ওই গৃহবধূর কীর্তিমান স্বামী ও শ্বশুর। যদিও আটক করা হয়েছে অভিযুক্ত শাশুড়িকে। বৃহস্পতিবার ভোরে এমন খুনের ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ইংরেজবাজার ব্লকের আনন্দীপুর গ্রামে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় মালদা মেডিকেল কলেজে।
মৃতের নাম আমিলি খাতুন (২২)। বাড়ি পাশের গ্রাম দুর্গাপুরে। গ্রামবাসী জানিয়েছেন, বছর সাতেক আগে আনন্দীপুর গ্রামের তরুণ আজিজুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। বিয়ের তিন বছর পর তাঁদের একটি পুত্রসন্তান হয়। এরপর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয়ে মতভেদ বাড়তে শুরু করে। বাড়তে থাকে পারিবারিক অশান্তি। গ্রামবাসীর অভিযোগ, স্বামী আজিজুর রহমান প্রায় প্রতিদিন রাতে মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে মারধর করতেন স্ত্রীকে। আমিলি সেই কথা বেশ কয়েকবার জানিয়েছেন বাপের বাড়ির লোকজনকে। কিন্তু সে বিবাদে ঢুকতে চাননি স্ত্রীর বাপের বাড়ির লোকজন। পাশাপাশি ঠিক কী নিয়ে বিবাদ তা স্পষ্ট করে বাবা বা দাদা-দিদিকে জানাননি আমিলি।
মৃতের দিদি মিলিয়ারা বিবির দাবি, ‘আমার বোন নিজের পছন্দে প্রেম করে বিয়ে করেছিল। সেইসময় ওর বিয়েতে বাবার অমত ছিল। কিন্তু বোনের জেদের কাছে হার মানেন বাবা। বিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম দিকে ওদের সম্পর্ক ভালো ছিল। কিন্তু ছেলে হওয়ার পর বোনের উপর মারধর শুরু করে। কিছুদিন আগে এমন মারা হয়েছিল যে বোনের নাক দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে।’
আমিলি খাতুনের দাদা মোজাফফর আলি জানিয়েছেন, ‘গ্রামের এক বাড়ি থেকে আমরা খবর পেয়েছি। বোনের শ্বশুরবাড়ি থেকে কিছু জানানো হয়নি। এসে দেখি আমিলির মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। গলায় আঘাতের চিহ্ন। বোনের চার বছরের ছেলে আজিজুলের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। ও বলল, মায়ের গলা টিপে বাবা মেরে ফেলেছে। আমরা জামাইয়ের কঠোর শাস্তি চাই।’
যদিও গ্রামের মানুষ জানাচ্ছেন, গতকালও স্বামী-স্ত্রী মিলে বাজারে গিয়েছিলেন। তারপর বৃহস্পতিবার ভোরে শুনতে পাই আমিলির স্বামী ওকে গলা টিপে খুন করেছে। কীভাবে ঘটল জিজ্ঞাসা করতেই ওদের চার বছরের ছেলে আমাদের জানিয়েছে, আজিজুর আমিলির গলা টিপে খুন করেছে। এরপরে অবস্থা বেগতিক দেখে আজিজুর আর ওর বাবা পালিয়ে গিয়েছে। তবে মা রফিনা বিবিকে পুলিশ আটক করেছে।’
যদিও মৃতদেহ উদ্ধারের পর পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, গলা টিপে ধরার পর ওড়না জড়িয়ে শ্বাসরোধ করা হয়েছে। এদিন সকালে আনন্দীপুরে গিয়ে দেখা গেল, দিদার কোলে বসে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে আজিজুল। ও ঠিক বুঝতেই পারছে না ঠিক কী হয়েছে। জিজ্ঞাসা করতেই বলে ওঠে, ‘মাকে গলা টিপে মেরে ফেলেছে বাবা।’