গাজা: ১-২ দিন নয়, টানা ১৮ মাস। যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজার আসল চেহারা গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরছিলেন তিনি। বুধবার ইজরায়েলি সেনার বিমান হামলায় মৃত্যু হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিপ্রাপ্ত সেই প্যালেস্তিনীয় চিত্রসাংবাদিক ফতিমা হাসৌনার। সেদিন নিজের বাড়িতেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন ফতিমা। আচমকা বাড়ির ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান ফতিমা সহ পরিবারের ১০ সদস্য। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর অন্তঃসত্ত্বা বোনও। ঘটনাচক্রে বৃহস্পতিবার ছিল তাঁর বিয়ের দিন। তার কয়েকঘণ্টা আগে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে ফতিমার গোটা পরিবার।
পেশাগত কারণে মৃত্যু যে সর্বক্ষণ তাঁকে ধাওয়া করছে তা অনুভব করতেন ফতিমা। তবে শেষ পরিণতি যে এভাবে ঘনিয়ে আসবে তা বোধহয় আঁচ করতে পারেননি। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে সামাজিক মাধ্যমে শেষ পোস্টটি করেছিলেন তিনি। লিখেছিলেন, ‘আমি যদি মারা যাই তাহলে সেই মৃত্যু যেন আলোড়ন ফেলে। আমি শুধু একটা ব্রেকিং নিউজ হয়ে থাকতে চাই না। কোনও দলের সদস্যের তকমা নিয়ে মরতে চাই না। এমন মৃত্যু চাই যেটা গোটা বিশ্ব জানতে পারবে। বহু দিন মনে রাখবে। স্থান-কাল-পাত্র দিয়ে যে মৃত্যুকে চেপে রাখা যাবে না।’
বেদনাদায়ক হলেও ফতিমার শেষইচ্ছা পূরণ হয়েছে। ইজরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের তীব্রতা বেড়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। ইজরায়েলি সেনার দাবি, হামাস জঙ্গিদের ঘাঁটি রয়েছে সন্দেহ করে বাড়িটিকে নিশানা করেছিল তারা। ফতিমার মৃত্যুর ঘণ্টা কয়েক আগে তাঁর জীবন ও কাজ নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্র আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবে প্রদর্শনের কথা জানিয়েছিলেন ইরানের পরিচালক সেপিদেহ ফারসি। তথ্যচিত্রের নাম ‘পুট ইয়োর সোল অন ইয়োর হ্যান্ড অ্যান্ড ওয়াক’।
ইজরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজা সাংবাদিকদের মৃত্যুপুরী। গত দু’বছরে সেখানে ৭০ জনের বেশি সংবাদকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এখনও হাতেগোনা কয়েকজন সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী সেখানে কাজ করছেন। তাঁদেরই একজন ছিলেন ফতিমা। গাজার সাংবাদিক মিকদাদ জামেল এক পোস্টে লিখেছেন, ‘তাঁর (ফতিমা) তোলা ছবিগুলি দেখুন। লেখা পড়ুন। ফতিমা গাজার মানুষ এবং এখানকার শিশুদের ভয়ংকর অবস্থার প্রত্যক্ষদর্শী। ক্যামেরার লেন্স দিয়ে তিনি সেইসব খণ্ডদৃশ্যের কথা লিখে রেখে গিয়েছেন।’