অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: ২০২৩ সালে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে একদিনের বিশ্বকাপের ফাইনালে শেষবার আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। দেশকে ট্রফি যেমন দিতে পারেননি তিনি, তেমনই গোড়ালির চোটের কারণে ক্রিকেট থেকেই ছিটকে গিয়েছিলেন বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে। ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছিল সংশয়।
মাঝে দীর্ঘসময় পার। এক বছর পর বাংলার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরেছিলেন মহম্মদ সামি। স্বপ্ন ছিল, স্যর ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে গিয়ে বর্ডার-গাভাসকার ট্রফিতে টিম ইন্ডিয়ার জয় নিশ্চিত করা। বাস্তবে সেটাও হয়নি।
যা হয়েছিল, তা চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে। গোড়ালির চোট থেকে ফিট হয়ে হাঁটু নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন সামি। বাংলার হয়ে রনজি, সৈয়দ মুস্তাক আলি, বিজয় হাজারে- সব প্রতিযোগিতার আসরেই বল হাতে নিয়মিত পারফর্ম করেছেন। কিন্তু হাঁটুর সমস্যার কারণে অস্ট্রেলিয়া সফরের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। হাল ছাড়েননি সামি। লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন। ওজন কমিয়েছিলেন। খাদ্যাভ্যাস পুরো বদলে ফেলেছিলেন। সেই লড়াইয়ের পুরস্কার পেলেন তিনি। আজ সন্ধ্যায় ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আসন্ন পাঁচ ম্যাচের টি২০ সিরিজের দলে প্রত্যাবর্তন ঘটালেন তিনি। আর তারপরই দিল্লি থেকে উত্তরবঙ্গ সংবাদ-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি।
প্রত্যাবর্তনের অভিনন্দন
ধন্যবাদ। শুধু আপনাকে নয়, যাঁরা কঠিন সময়ে আমার পাশে ছিলেন, নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন- সবার কাছেই আমি কৃতজ্ঞ।
দলের বাইরে থাকার যন্ত্রণা
দেখুন একজন ক্রীড়াবিদ সবসময় মাঠে নামতে চায়। পারফর্ম করতে চায়। আমিও তাই চাই। কিন্তু একদিনের বিশ্বকাপ ফাইনালের পর থেকে আমার জীবনটা বদলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের ধাক্কার পর দুশ্চিন্তা ছিল, আমি পারব তো? আজ জাতীয় দলে ফিরতে পেরেছি বলে বলছি, এমন নয়। আমি যে ফুরিয়ে যাইনি, সেটা প্রমাণ করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি এখন।
প্রত্যাবর্তনের খবর
জাতীয় নির্বাচক কমিটির বৈঠকের সময়ই ফোন এসেছিল। তখনই বুঝে যাই, আবার টিম ইন্ডিয়ার জার্সি গায়ে নামার সুযোগ আসছে। তার আগে বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে ফিট শংসাপত্রও পেয়ে গিয়েছি। কেরিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় দিন।
ইডেনেই প্রত্যাবর্তন
হ্যাঁ, এটাও আমার জন্য দারুণ ব্যাপার বলতে পারেন। ক্রিকেটার হিসেবে ইডেন গার্ডেন্স থেকেই তো পথ চলার শুরুটা হয়েছিল। ওই মাঠের সঙ্গে বহু স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। সেখানেই ২২ জানুয়ারি খেলতে নামব, ভাবলেই গর্ব হচ্ছে। ইডেনের ভরা গ্যালারির সমর্থন আমার জন্য বিরাট প্রাপ্তি হতে চলেছে।
কঠিন সময়ের বন্ধুরা
চোটের কারণে ক্রিকেটের বাইরে থাকার সময়ে বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি আমার ঘরবাড়ি হয়ে উঠেছিল। নিজের গাড়িটাও একসময় বেঙ্গালুরু নিয়ে চলে গিয়েছিলাম। উদ্যাননগরীর বহু রাস্তাই এখন আমার মুখস্থ। ওখানে অনেক বন্ধু রয়েছে আমার। সবাই আমার জন্য প্রার্থনা করত। আসলে জীবন এরকমই। আল্লার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।