চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার: তিস্তা-তোর্ষা, কাঞ্চনকন্যা ও উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস। কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গে আসার তিনটি অন্যতম প্রধান ট্রেন। পর্যটকদের পাশাপাশি বহু সাধারণ মানুষও কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে আসার জন্য বা উত্তরের জেলাগুলি থেকে কলকাতায় যাওয়ার জন্য এই ট্রেনে চাপেন। আবার উত্তর-পূর্ব ভারত ও দক্ষিণ এবং পশ্চিম ভারতের মধ্যে সংযোগকারী বিভিন্ন ট্রেনও উত্তরবঙ্গের ওপর দিয়ে চলাচল করে। বহু পরিযায়ী শ্রমিক ওই ট্রেনে যাতায়াত করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এই ট্রেনগুলিতে পুরনো প্রযুক্তির আইসিএফ কোচ ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই কোচগুলির অবস্থাও লঝ্ঝড়ে।
ওডিশার বালাসোরের কাছে ট্রেন দুর্ঘটনায় যেখানে উন্নত জার্মান প্রযুক্তির এলএইচবি কোচেরই ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়েছে, সেখানে আইসিএফ কোচ হলে কী হত সেটা ভাবতে গিয়ে শিউরে উঠছেন অনেকে। অন্যান্য জোনে যখন এলএইচবি রেকের ট্রেন চলাচলের সংখ্যা বাড়ছে, তখন ভারতীয় রেলে সবচেয়ে বড় জোন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের এত গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলি কেন এখনও পুরোনো কোচ দিয়ে চলছে, তার উত্তর খুঁজছেন, যাত্রী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ।
উত্তরবঙ্গ, কাঞ্চনকন্যা বা তিস্তা-তোর্ষার মতো ট্রেনগুলিতে যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করেন, তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, ট্রেন যখন জোরে ছোটে তখন ঝাঁকুনিতে ভয় লেগে যায়। যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতি বছর ভাড়া বাবদ কোটি কোটি টাকা আয় করছে রেল। অথচ পুরনো মান্ধাতা আমলের আইসিএফ কোচগুলি বদল করার ক্ষেত্রে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
য়াত্রীদের মধ্যে অমল সরকার, বিবেক রায়দের অভিযোগ, পুরোনো কোচ দিয়ে ট্রেনগুলো চালানো হচ্ছে। কোচের থেকে ইঁদুর, আরশোলা বেরিয়ে আসছে। লকগুলোও খারাপ। শৌচালয়ে অবস্থা ভালো নয়। কোচগুলোর যা অবস্থা তাতে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা হতে পারে।
বছর দেড়েক আগেই ময়নাগুড়ির কাছে দোমোহনিতে বেলাইন হয়ে গিয়েছিল আপ বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। ঘটনায় নয় জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় ইঞ্জিনের ত্রুটিকে দায়ী করা হলেও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, আইসিএফের বদলে যদি ওই ট্রেনে এলএইচবি কোচ থাকত, তাহলে নিহতের সংখ্যা হয়তো আরও কম হত।
এ বিষয়ে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেন, কয়েকটি ট্রেনের রেক পরিবর্তন করা হয়েছে। বাকিগুলিও এলএইচবি রেকের হয়ে যাবে। এখন আইসিএফ কোচ তৈরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগেই গুয়াহাটি-সেকেন্দ্রাবাদ এক্সপ্রেসকে এলএইচবি রেকের করা হয়েছে। দূরপাল্লার ট্রেনগুলি আগে আইসিএফ থেকে এলএইচবি রেকে উন্নীত হচ্ছে। কম দূরত্বের ট্রেনগুলিও এলএইচবি রেক ব্যবহার হবে। তবে একটু সময় দিতে হবে।
বর্তমানে রাজধানী এক্সপ্রেস, শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনগুলিতে এলএইচবি কোচ রয়েছে। দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেস, নর্থইস্ট এক্সপ্রেস, কামরূপ এক্সপ্রেস সহ কিছু ট্রেনে এই উন্নত মানের এলএইচবি কোচ লাগানো হয়েছে। বালাসোরের ক্ষেত্রে এলএইচবি রেক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই রেক অনেক বেশি নিরাপদ ও আরামদায়ক। রেল সূত্রে খবর, বালাসোরের ক্ষেত্রে আইসিএফ কোচ থাকলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ত। পাশাপাশি এই কোচ থাকলে ট্রেনের গতিও বাড়ে। কিন্তু উত্তরবঙ্গ বা উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সিংহভাগ এক্সপ্রেস এবং প্যাসেঞ্জার ট্রেনগুলোর কোচগুলোর অবস্থা এতটাই খারাপ যে ট্রেনের গতি বাড়ছে না। মাঝেমধ্যে জোড়াতালি দিয়ে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।