নৃসিংহপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়, কুমারগ্রাম: প্রশাসন ও পুলিশি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় নদী বা ঝোরার বালি-পাথর তুলে আর যাই হোক ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা প্রায় বন্ধের মুখে। এতে বিপাকে পড়েছেন পাহাড়ি নদী অধ্যুষিত কুমারগ্রাম ব্লকের কয়েক হাজার শ্রমিক, যাঁরা বালি-পাথর তোলার কাজ করতেন।
প্রশাসনিক বাধায় অধিকাংশ নদীর বেডের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই শ্রমিকদের অনেকে এখন ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। কেউ কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে চলে গিয়েছেন। এই দুই কারণে বালি-পাথরের কারবারের ভাটা পড়ছে। বছর দুয়েক আগেও কুমারগ্রামের রায়ডাক এবং সংকোশের পাশাপাশি অন্য নদী ও পাহাড়ি ঝোরা থেকে দিনরাত অবাধে বালি-পাথর তুলে পাচারের ছবিটা এখন বদলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা তপন সরকার বলেন, ‘পেটের তাগিদে এলাকার অনেকে পেশা বদলে এখন ঘরছাড়া।’ এলাকার পাঁচকল ওরাওঁ হরিয়ানায় প্লাইবোর্ড কোম্পানিতে কাজ করেন। মাতলু ওরাওঁ কেরলে আছেন। সংসার চালাতে ধারদেনা করে কেনা টোটো চালান বন্ধু ওরাওঁ। নির্মল দাস ভুটানে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করেন। মধ্য হলদিবাড়ির মিঠুন দাস, ভাস্কর দাস, সাধুরা দাসরা পাড়ি দিয়েছেন কাশ্মীরে।
কুমারগ্রামের সর্বত্র বালি-পাথর তুলতে যন্ত্রদানবের দাপাদাপি আর আগের মতো নেই। সংকোশ নদীর পাশে ফাগুডোবা, চৌধুরীঘাট, উত্তর হলদিবাড়ি বা রায়ডাক নদীর পাড়ে ধুমপাড়াঘাট, অমরপুর, জয়দেবপুর, টিয়ামারিঘাট ইত্যাদি গ্রামে চোরাগোপ্তা বালি-পাথর পাচারের কারবার অনেকটা কমেছে। কুমারগ্রাম ব্লকে একসময়ে প্রায় ৩১টি নদীর বেড থেকে বালি-পাথর তোলার অনুমতি ছিল। এখন সেখানে রায়ডাক ও সংকোশ নদীর মাত্র ৪টি বেডে বৈধ অনুমতি রয়েছে।
পুলিশের কড়াকড়ির পাশাপাশি প্রশাসনের মাঝেমধ্যে তল্লাশিতে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অতিরিক্ত বালি-পাথর পরিবহণের ওপর জরিমানা করা হচ্ছে। বালি-পাথর তোলার ঢালাও অনুমোদন না থাকায় কয়েক হাজার শ্রমিক এখন কর্মহীন। রায়ডাক নদীর পাশে জয়দেবপুর বেড এখন খাঁখাঁ করছে। অথচ এখানে একসময় শয়ে-শয়ে শ্রমিক সকাল থেকে সন্ধে বালি-পাথর তুলতেন।