জসিমুদ্দিন আহম্মদ, মালদা : ফুটফুটে ছেলেটা এভাবে চলে গেল, বিশ্বাসই করতে পারছেন না কেউ। আগামী বছরই উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল ইউনিসের। তবে অভাবের সংসারের চাকা ঘোরাতে লেখাপড়ায় ইতি টেনে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিতে হয় তাকে। তবে কাজ আর তার সইল না। বরং এসএমভিটি-হাওড়া এক্সপ্রেস প্রাণটাই কেড়ে নিল আঠারো বছরের ইউনিস আলির।
এদিকে, ইউনিসের দেহের দাবি নিয়ে দুই পরিবারে টানাপোড়েন চলে বালাসোরে। একই নামের দুই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ায় সেখানকার প্রশাসন দেহ শনাক্তকরণে সমস্যার মধ্যে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ভাইয়ের দেহ শনাক্ত করতে বালাসোরে যান ইউনিসের এক দাদা।
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ইউনিস প্রায় মাসখানেক আগে জামিল আখতার সহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশে শ্রমিকের কাজ করতে যায়। অন্ধ্রে মাসখানেক কাটিয়ে শুক্রবার যশবন্তপুর থেকে হাওড়া হয়ে বাড়ি ফিরছিল ইউনিস। তখনও জানা ছিল না কি ভয়ানক বিপদ অপেক্ষা করে রয়েছে তাদের জন্য।
দুর্ঘটনায় আহত জামিল ইউনিস সহ বাকিদের খোঁজ করতে থাকেন। তখনই জানতে পারেন, ইউনিসের মৃত্যু হয়েছে। গ্রামের বাড়িতে তিনি এই ঘটনার খবর পৌঁছে দেন। খবর পেয়ে ইউনিসের দাদা বালাসোরের উদ্দেশে রওনা দেন। তবে ইউনিসের মৃতদেহ নিয়ে ধন্দ দেখা দিয়েছে। অন্য একটি পরিবারও ইউনিসের মৃতদেহটিকে নিজেদের বলে দাবি করে। ফলে মৃতদেহটি কোন ইউনিসের, তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। মৃতদেহের প্রকৃত দাবিদার নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জামিলই ইউনিসকে নিজেদের লোক বলে প্রমাণ করতে পারেন।
রবিবার এই খবর পাওয়ার পরেই ব্লক প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি এবং জনপ্রতিনিধিরা ওই ছাত্রের বাড়িতে পৌঁছে যান। পরিবারের সদস্যদের প্রতি তাঁরা সহমর্মিতা জানান। সেইসঙ্গে অসহায় পরিবারটিকে সাহায্যের আশ্বাস দেন। মৃতের বাবা সাজ্জাদ আলি বলেন, ইউনিস বাড়ির সবথেকে ছোট ছেলে ছিল। সংসারে অভাব থাকায় সে পড়াশোনা বন্ধ করে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিল। কিন্তু এমন মর্মান্তিক পরিণতি হবে, ভাবতে পারিনি।