জামালদহ: মেখলিগঞ্জ ব্লকের জামালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম রতনপুর। রতনপুর গ্রাম যেখানে শেষ সেখান থেকে শুরু হয় লোথামারি গ্রামের। কাঁটাতারের বাইরে ভারতের এই গ্রামটিতে পঞ্চাশের বেশি পরিবারের বাস। প্রতিদিন কাঁটাতার পেরিয়ে যাতায়াত করেন গ্রামের বাসিন্দারা।
প্রতিবছর দোল উপলক্ষ্যে ওই গ্রামে বসে অষ্টপ্রহর কীর্তনের আসর। স্থানীয় সমাজবন্ধু ক্লাবের উদ্যোগে শ্রীশ্রী কোট ধুলিয়া পুজো ও মেলাও সেখানে অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার বসেছিল কীর্তনের আসর। এলাকা থেকে তো বটেই বাইরে থেকেও ব্যবসায়ীরা পসরা নিয়ে বসেন সেখানে। প্রতিবছর এই মেলায় বাংলাদেশ থেকে আসেন পুণ্যার্থীদের দল। এককথায়, লোথামারির মেলা হয়ে ওঠে মিলনমেলা।
কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পালাবদলের পর এবছর অন্য চিত্র ধরা পড়ল লোথামারিতে। কাঁটাতারের গেটে অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন বিএসএফ জওয়ানরা। কাঁটাতারের গেটের সামনে পরিচয়পত্র দেখিয়ে তবে মিলছিল গ্রামে প্রবেশের ছাড়পত্র। ফলে বাংলাদেশিদের আগমন এবছর কিছুটা হলেও কম ছিল। বিজিবি বছরের একটি দিন বাংলাদেশিদের সেভাবে বাধা না দিলেও এবছর বিএসএফের তরফে কড়াকড়ি চোখে পড়ে।
আয়োজক কমিটির তরফে এদিন খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছিল। সেই প্রসাদ গ্রহণের লাইনে দেখা গেল জামালদহের পরিমল বর্মন, শিপক বর্মনদের। তাঁরা জানান, বছরের এই একটা দিন বাংলাদেশের মানুষজন পরিচয়পত্র দেখিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে মেলায় আসেন। এই মেলার অনুভূতিই আলাদা। পরিমল বলেন, ‘আমরা ছোট থেকেই দেখে আসছি এই মেলা আক্ষরিক অর্থে দুই দেশের মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেও এখানে বন্ধুত্বপূর্ণ মেলবন্ধন দেখতে পাওয়া যায়।’
মেলা প্রাঙ্গণ থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিজিবির জওয়ানরা। সন্ধ্যার আগেই অবশ্য নিজেদের দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশিদের। অনেকে আবার এই কড়াকড়ির জন্য দূর থেকেই কীর্তন শুনছিলেন।মেলা কমিটির সদস্য অসীম প্রধান বলেন, ‘প্রতিবছর লোথামারিতে এই কীর্তন এবং মেলার আয়োজন করা হয়। এই কাজে সাহায্য করে বিএসএফ। এবছর বাংলাদেশিরা মেলায় সেভাবে আসতে পারেনি। সেজন্য কিছুটা হলেও সবার মন খারাপ।’ স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য কৌশিক রায়ের গলাতেও মিলনের সুর। তিনি জানান, কাঁটাতারের বেড়া দুটো দেশের মানুষকে আলাদা করলেও কোথাও না কোথাও তাঁরা এক।