প্রধানমন্ত্রী একাদশ-২৪০ ভারত-২৫৭/৫
ক্যানবেরা: দুইদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ। শনিবার প্রথম দিনের খেলা বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ায় যা বদলে যায় ৫০ ওভারের ম্যাচে। গোলাপি বলে প্র্যাকটিসের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া প্রধানমন্ত্রী একাদশের বিরুদ্ধে সহজ জয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়ে ফিরল ভারত।
তারুণ্যের তেজ। প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিতে সেটাই যথেষ্ট। বল হাতে হর্ষিত রানা (৪/৪৪), ব্যাটিংয়ে শুভমান গিল (অপরাজিত ৫০ অবসৃত), যশস্বী জয়সওয়াল (৪৫), নীতীশকুমার রেড্ডি (৪২), ওয়াশিংটন সুন্দরদের (৪২) মিলিত প্রয়াসের অনায়াস জয়।
ব্যাটে-বলে আধিপত্য দেখিয়ে চলতি সফরে প্রথম ট্রফি লাভ। প্রস্তুতি ম্যাচে পাওয়া যে ট্রফি নিয়ে রোহিত শর্মাদের উৎসাহ দেখার মতো। ম্যাচে না খেললেও ট্রফি হাতছাড়া করতে রাজি ছিলেন না ঋষভ পন্থ। অবশ্য আসল লক্ষ্য বর্ডার-গাভাসকার ট্রফি, বলার অপেক্ষা রাখে না।
পারথ টেস্টে জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত। ৬ ডিসেম্বর অ্যাডিলেডে গোলাপি বলের টেস্ট জিতে স্কোরলাইন ২-০ করা পাখির চোখ। আর আসন্ন যে দিনরাতের টেস্ট দ্বৈরথের পূর্বে ওপেনিং কম্বিনেশন নিয়ে বড় ইঙ্গিত রোহিতের।
টেস্ট কিংবা সংক্ষিপ্ত ফর্ম্যাট, ওপেনিং পছন্দের জায়গা। একাধিকবার বলেওছেন। দলের স্বার্থে সম্ভবত পছন্দের জায়গা ছাড়তে চলেছেন অধিনায়ক রোহিত। রোহিত ফিরলেও যশস্বী-লোকেশ রাহুল এদিনও ওপেন করেন। তিনে শুভমান। রোহিত নিজে চার নম্বরে!
রোহিতের অনুপস্থিতিতে পারথ টেস্টে সফল যশস্বী-লোকেশ জুটি। দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিশতরানের পার্টনারশিপে ম্যাচের ভাগ্যও গড়ে দেন। দুই ইনিংসেই নতুন বলে লোকেশকে আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। সফল জুটি না ভাঙার ইঙ্গিত প্রস্তুতি ম্যাচে।
এদিনও ৪৪ বলে ২৭ করার পর বাকিদের প্র্যাকটিস দিতে মাঠ ছাড়েন লোকেশ। যতক্ষণ ছিলেন গোলাপি নতুন বলে নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিং। যশস্বী চেনা মেজাজে ব্যাট ঘোরালেন। রোহিতের যে পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকে। তাঁদের বিশ্বাস, গোলাপি টেস্টেও ওপেনিংয়ে যশ-লোকেশ জুটি সফল হবে।
রোহিত সেক্ষেত্রে পাঁচে খেলবেন। তিনে শুভমান, চারে বিরাট কোহলি। ছয়ে ঋষভ পন্থ। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময় ওপেনিং জুটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। ডান-বঁা কম্বিনেশনে যশস্বীকে ওপেনিংয়ে খেলাতে শেষপর্যন্ত শুভমানকে পিছিয়ে তিনে নামানো হয়।
এবার হয়তো লোকেশকে জায়গা দিতে নিজেই মিডল অর্ডারে নামতে চলেছেন রোহিত। অভিষেক টেস্টে ৬ নম্বরে নেমে ১৭৭ রানের সুবাদে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন হিটম্যান। দলের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে ফের মিডল অর্ডারের পথে রোহিত।
ব্যাটার রোহিতকে নিয়ে চিন্তা যাচ্ছে না। চার নম্বরে নামলেও এদিন ফের অফস্টাম্পের বাইরের বল অহেতুক তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ প্র্যাকটিস করালেন। ১১ বলে ৩। পারথে খেলেননি। অ্যাডিলেডে নামার আগে বাইশ গজে আরও কিছুটা সময় কাটানো দরকার ছিল রোহিতের।
বিরাট আবার ব্যাটিংয়ের রাস্তাতেই হাঁটেননি। ম্যাচ প্র্যাকটিসের বদলে নেটে জসপ্রীত বুমরাহর বিরুদ্ধে ঘাম ঝরালেন। ঋষভ সম্পূর্ণ বিশ্রামে। উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্বে সরফরাজ খান! নিজেকে নতুনভাবে চেনালেন সরফরাজ, তবে ব্যাটিং-ব্যর্থতা কাটছে না সরফরাজের (১)। অ্যাডিলেড টেস্টের ভাবনায় অবশ্য নেই সরফরাজ।
স্বস্তি দিচ্ছে ৬ ডিসেম্বর গোলাপি টেস্টের সম্ভাব্য একাদশের অধিকাংশ খেলোয়াড়ের ফর্ম। শুরুটা হর্ষিতের হাত ধরে। বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজের সঙ্গে তৃতীয় পেসারের দায়িত্বে পারথে অভিষেক টেস্টে সাফল্য পেয়েছিলেন। এদিন ঝোলায় ৪৪ রানে চার শিকারে। এরমধ্যে ৬ বলের বিধ্বংসী স্পেলে ১৩১/২ থেকে প্রধানমন্ত্রী একাদশকে ১৩৩/৬ করে দেন হর্ষিত।
আকাশ দীপ দুই উইকেট নেন। ভারতীয় বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মাঝে ব্যতিক্রম বছর উনিশের স্যাম কোনস্টাস। কেন তাকে অজি ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ বলা হয়, ১০৭ রানের ইনিংসে বোঝালেন। তবে গোলাপি টেস্টে জোশ হ্যাজেলউডের সম্ভাব্য বিকল্প স্কট বোল্যান্ডকে উইকেট না দিয়ে মনস্তাত্বিক যুদ্ধে কিছুটা সুবিধা আদায় করে নিলেন গৌতম গম্ভীরের ছেলেরা। ৪৩ ওভারের মধ্যে প্রতিপক্ষের ২৪০ স্কোর পেরিয়ে গেলেও, প্রস্তুতির জন্য পুরো ৪৬ ওভার খেলা হয়। ভারত করে ২৫৭/৫।
নিজের প্র্যাকটিসের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করলেও রোহিত খুশি দলের পারফরমেন্সে। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘দারুণ জয়। দলগত প্রচেষ্টার কথা বলব। দুর্ভাগ্য, পুরো ম্যাচটা পেলাম না। তবে যতটুকু সময় পেয়েছি, তার মধ্যে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা।’