কলম্বো: আশঙ্কাই সত্যি। শ্রীলঙ্কার স্পিন-জালে ভরাডুবি ভারতের। শুক্রবার টাই ম্যাচে রোহিত শর্মা ব্রিগেডের স্পিন-দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন চরিথ আসালাঙ্কারা। রবিবাসরীয় দ্বৈরথে আজ শ্রীলঙ্কান স্পিন ধাক্কায় একেবারে বেলাইন ‘মেন ইন ব্লু’।
২৪১ রানের জয়লক্ষ্যে রোহিত শর্মা (৬৪)-শুভমান গিল (৩৫) ওপেনিং জুটিতে ৯৭ রান যোগও করে ফেলেছিলেন। সবে তখন ১৩.২ ওভার। হাতে অঢেল সময়, পুরো দশ উইকেট। রোহিত একেবারে হিটম্যানসুলভ মেজাজে। যদিও ৯৭/০ সুবিধাজনক পরিস্থিতি থেকেই উলটপুরাণ।
ঘাতক জেফ্রি ভ্যানডারসে। যাঁর লেগস্পিনের ধাক্কায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ভারতীয় ইনিংস। ফলস্বরূপ ৯৭/০ থেকে ১৪৭/৬! ভ্যানডারসের (৩৩/৬) ঝুলিতেই হাফডজন উইকেট! অক্ষর প্যাটেল (৪৪) শেষদিকে মরিয়া চেষ্টা চালালেও যে ছবিটা বদলাতে পারেননি।
শেষপর্যন্ত ২০৮ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। ৩২ রানে ম্যাচ জিতে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা। বুধবার শেষ ম্যাচ রোহিত-বিরাট কোহলিদের জন্য সিরিজ বাঁচানোর দ্বৈরথ।
শ্রীলঙ্কার জয়ে নায়ক একান্তভাবেই ভ্যানডারসে। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ডি সিলভা চোট না পেলে যাঁর খেলারই কথা নয়। প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দুই হাত ভরে নিলেন বছর চৌত্রিশের লেগস্পিনার। ওডিআই কেরিয়ারের সেরা বোলিংয়ে ভারত-বধ। শুরুটা রোহিতকে দিয়ে। গৌতম গম্ভীর জমানায় ব্যাটারদের দিয়েও বোলিংয়ের পরিকল্পনা। এদিন ২ ওভার হাত ঘোরান স্বয়ং রোহিত। উইকেটের খাতা খুলতে না পারলেও ব্যাট হাতে গড়লেন নয়া নজির।
৬৪ রানের ইনিংসে রাহুল দ্রাবিড়কে (১০,৭৬৮) টপকে ভারতীয়দের তালিকায় চতুর্থ স্থানে পৌঁছে গেলেন। সঙ্গে পাওয়ার প্লে-তে (৭৬/০) দলের দাবি মেটানোর প্রয়াস। ২৯ বলে ৫৭ নম্বর হাফ সেঞ্চুরিও পূরণ করে নেন রোহিত।
৩২তম সেঞ্চুরির সম্ভাবনার মাঝেই রোহিত-শোয়ে ইতি। শুরু ভ্যানডারসে-ম্যাজিক। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে উইকেট খোয়ান হিটম্যান। বাকি সময়ে স্পিন-ঠকঠকানি, আয়ারাম-গয়ারাম দৃশ্য। রোহিত, শুভমানের দুরন্ত ক্যাচে কৃতিত্ব প্রাপ্য পাথুম নিসাঙ্কা, কামিন্দু মেন্ডিসেরও। ব্যাটিং, বোলিং, ক্যাচিং-সব বিভাগেই ভারতকে টেক্কা দিয়েছে সনৎ জয়সূর্যের দল।
একবার রেহাই পেলেও (লেগবিফোরে রিভিউ নিয়ে বাঁচলেও যা মানতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ক্ষোভে হেলমেট মাটিতে ছুড়ে ফেলেন কুশল মেন্ডিস) বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি বিরাট (১৪)। শিবম দুবে (০), শ্রেয়স আইয়ার (৭), লোকেশ রাহুলরাও (০) হদিস পাননি ভ্যানডারসের লেগস্পিনের।
অক্ষর অবশ্য যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, ৪৪ বলে ৪৪ রানের ইনিংসে আশা জিইয়ে রেখেছিলেন। যা সরিয়ে দেন অধিনায়ক আসালাঙ্কা (২০/৩)। নিজের বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুরন্ত ক্যাচ ধরেন। এরপর ওয়াশিংটন সুন্দরকেও (১৫) ফিরিয়ে জয় নিশ্চিত করে দেন আসালাঙ্কা।
অথচ, এর আগে নাটকীয়ভাবে ম্যাচের শুরু করেছিল ভারত। টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে প্রথম বলেই গোল্ডেন ডাক নিসাঙ্কা। মহম্মদ সিরাজের বেরিয়ে যাওয়া বল নিসাঙ্কার ব্যাট ছুঁয়ে সোজা লোকেশের দস্তানায়।
চাপটা নতুন বলে বজায়ও রাখেন মহম্মদ সিরাজ-অর্শদীপ সিং জুটি। তবে এদিন শ্রীলঙ্কার ইনিংসজুড়ে পালটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার মেজাজ। আবিষ্কা ফার্নান্ডো (৪০)-মেন্ডিসের (৩০) ৭৩ রানের পার্টনারশিপ দিয়ে লড়াইয়ে ফেরা শুরু।
শেষপর্যন্ত জুটি ভাঙেন সুন্দর। আবিষ্কা খুচরো রানের ভাবনায় লোপ্পা ক্যাচ দিয়ে বসেন বোলারকেই। সুন্দরের স্পিনে পরাস্ত হয়ে লেগবিফোর কুশল। সাদিরা সমরাবিক্রমে (৪) দ্রুত ফেরার পর মাঝে ফের প্রতিরোধ।
আসালাঙ্কা (২৫), জানিথ লিয়ানাগেদের (১২) লম্বা ইনিংস খেলার সুযোগ দেয়নি ওয়াশিংটন (৩০/৩), কুলদীপ (৩৩/২)। আসালাঙ্কা যখন আউট হন স্কোর ১৩৬/৬। এখান থেকে ফের কাঁটা হয়ে বিঁধলেন দুনিথ ওয়েল্লালাগে।
প্রথম ম্যাচে ৬৭ রানের ইনিংস ভারতের জয় আটকে দেন। আজ দুনিথের ৩৯। ডেথ ওভারে সিরাজদের (৪৩/১), অর্শদীপদের (৫৮/০) গতি কাজে লাগিয়ে কামিন্দুও (৪০) ভারতের চ্যালেঞ্জ কঠিন করে দেন। যে হার্ডল পেরোতে পারেনি তারকাখচিত ভারতীয় ব্যাটিং।