অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতাঃ নিউজিল্যান্ড ৩। ভারত ০। কোনও ফুটবল ম্যাচের স্কোরলাইন নয়। দেশের মাটিতে, চেনা পরিবেশে, পছন্দের পিচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে টিম ইন্ডিয়ার লজ্জা ও হতাশার ভয়ংকর ছবি। যার নির্যাস, ১২ বছর পর সিরিজ হার। আর ২৪ বছর পর ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ। এমন ঘটনা ভারতীয় ক্রিকেটকে প্রবলভাবে ধাক্কা দিয়েছে। সঙ্গে ঘরের মাঠে বাঘ, আর বিদেশে গেলে বিড়াল-বহু যুগ ধরে চলে আসা টিম ইন্ডিয়ার জামার কলার তুলে রাখার আস্ফালনও শেষ করে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
টম ল্যাথামের নিউজিল্যান্ড প্রমাণ করে দিয়েছে, টিম ইন্ডিয়া ঘরের মাঠেও আর বাঘ নয়। বরং চাপের মুখে গুটিয়ে যাওয়া বিড়াল। যারা লড়াই করতে পারে না (আসলে জানে না)। যাদের ব্যাটিং স্কিল বলে কিছু নেই। বল নড়লেও সমস্যা। ঘুরলেও যন্ত্রণা। অথচ, দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিংলাইনের তকমাও চাই! কেন এমন হাল হল টিম ইন্ডিয়ার? ১০ নভেম্বর পারথ রওনা হওয়ার আগে বেসরকারিভাবে ব্যর্থতার ময়নাতদন্ত করতে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড। যেখানে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা, কোচ গৌতম গম্ভীর, জাতীয় নির্বাচক কমিটির প্রধান অজিত আগরকার ও বোর্ড সচিব জয় শা-র থাকার কথা। মুম্বইয়ে এই বৈঠক হওয়ার কথা।
দলের অবাক করার মতো ব্যর্থতার দায়ভার নিয়েছেন অধিনায়ক রোহিত। সতীর্থ ব্যাটারদের সমালোচনা করলেও আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে দ্রুত ভুল শুধরে নেওয়ার কথাও শোনা গিয়েছে হিটম্যানের গলায়। বাস্তবে ভুলের ভুলভুলাইয়ার সরণিতে যে অধিনায়ক রোহিত নিজেও রয়েছেন। আর তাঁর সবচেয়ে কাছের দোসর হিসেবে প্রবলভাবে রয়েছেন বিরাট কোহলিও। ব্ল্যাক ক্যাপসদের বিরুদ্ধে সিরিজ দেখিয়ে দিয়েছে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের দুই স্তম্ভ রোহিত-বিরাট জমানার শেষের শুরু। রাতের দিকে বিসিসিআইয়ের অন্দরমহল থেকে সামনে এসেছে আরও চমকপ্রদ তথ্য। জানা গিয়েছে, স্যর ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে টেস্ট সিরিজে অপরাজিত থেকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল নিশ্চিত না হলে সিডনিতে অধিনায়ক রোহিত, বিরাট, রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বীনরা তাঁদের কেরিয়ারের শেষ টেস্ট খেলবেন। সিডনিতে রোহিত-বিরাটদের টেস্ট থেকে অবসর ঘোষণার চিত্রনাট্যও প্রায় তৈরি। নাম না লেখার শর্তে বোর্ডের এক কর্তা উত্তরবঙ্গ সংবাদকে বলেন, ‘ঘরের মাঠে এমন ব্যর্থতা মেনে নেওয়া কঠিন। দলে এবার পরিবর্তন প্রয়োজন। ভারত ডব্লিউটিসির ফাইনালে না উঠলে সিডনি টেস্টের পরই সিনিয়াররা অবসর গ্রহে চলে যাবেন। আর তাজা রক্ত আসবে ভারতীয় ক্রিকেটে।’
নিজের অফস্টাম্প কোথায়, ভুলে গিয়েছেন বিরাট-রোহিত। অনিশ্চয়তায় সরণিতে পড়া ডেলিভারি কীভাবে সামলাতে হয়, সেটাও তাঁরা ভুলেছেন। উপরি হিসেবে স্পিন, পেস-কোনওটাই খেলতে না পারার ধাক্কা ভারতীয় ক্রিকেটে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পরিসংখ্যান বলছে, তিন টেস্টের ছয় ইনিংসে রোহিতের সংগ্রহ ৯১ রান। আর বিরাটের ৯৩। যেন বিখ্যাত শোলে চলচ্চিত্রের জয়-বীরু। বারবার একই ভুল করব, উইকেটে পড়ে থাকব না, ক্রিকেটীয় ইনটেন্টও দেখাব না, ঘরোয়া ক্রিকেটও খেলব না-বিরাট-রোহিতের এমন আজব শো অতীতে দেখেনি দুনিয়া।
বিরাট-রোহিতদের অবসর জল্পনার ঘণ্টা বাজার পাশে ভারতীয় ক্রিকেটে আরও একটি বাজনাও বাজতে শুরু করেছে। যার মূলে কোচ গৌতম গম্ভীর। কোচ হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা ও সাফল্য, দুইয়ের ভাঁড়ারই বেশ ফাঁকা। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল জেতা ছাড়া বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ গম্ভীর আর কিছুই করেননি। সেই অভিজ্ঞতা কি টিম ইন্ডিয়ার কোচিংয়ের জন্য যথেষ্ট? দেশের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হোয়াইটওয়াশের পর অস্ট্রেলিয়া সফরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে কোচ গম্ভীরের ‘গর্দান’ যেতে সময় লাগবে না। তাছাড়া মিশন অস্ট্রেলিয়ার দল নির্বাচনে ইতিমধ্যেই গম্ভীরের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, তাঁর অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার বড্ড অভাব। গম্ভীরের অনভিজ্ঞতার সেরা উদাহরণ হতে পারে, স্যর ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে প্রাক সিরিজ অনুশীলন ম্যাচ বাতিল।
অনভিজ্ঞ কোচের পাশে শেষের শুরু হয়ে যাওয়া রোহিত-বিরাটদের আস্ফালনের শেষটা কীভাবে হয়, সেটাই এখন দেখার। চূড়ান্ত কাউন্ট ডাউন কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে।