পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: রেলের সুরক্ষা (Railway Safety) ব্যবস্থা নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কম। যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে বারবার বৈঠকে আলোচনা হলেও বাস্তবে কোনও পদক্ষেপ করা হয় না। রেলের একাধিক ইউজার্স কনসালটেটিভ কমিটির বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্যরা এমনই প্রশ্ন তুলেছেন। রাষ্ট্রীয় রেল সুরক্ষা কোষ থেকে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলকে ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে ৩৩৬ কোটি টাকা রেল সুরক্ষার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু কবচ সুরক্ষা ব্যবস্থার রূপায়ণ তো দূরের কথা। অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ। শুধুমাত্র সিগন্যালিং ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নতিকরণ হয়েছে আলিপুরদুয়ার, রঙ্গিয়া, কাটিহার, তিনসুকিয়া ও লামডিং স্টেশনের মতো কিছু জায়গায়। কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী জানিয়েছেন, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম রয়েছেন চালক ও গার্ডম্যান। যার ফলে চালক ও গার্ডম্যানের ওভার টাইম ডিউটি করতে হচ্ছে। ফলে কাজের মান নেমে যাচ্ছে। যে কারণে দুর্ঘটনা (Train Accident) ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
সোমবার ফাঁসিদেওয়ার নিজবাড়ি এলাকার কাছে মালগাড়ির ধাক্কায় শিয়ালদাগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (Kanchanjunga Express) দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছিল। চালক সহ বেশ কয়েকজন যাত্রীর মৃত্যু হয়। প্রশ্ন উঠেছে, দুটি ট্রেনের ক্ষেত্রেই ম্যানুয়াল সিগন্যালিং বা পেপার ক্লিয়ারেন্স দিয়েই ওই রুটে চালানো হচ্ছিল। তাই দুর্ঘটনা ঘটে।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জোনাল রেলওয়েজ ইউজার্স কনসালটেটিভ কমিটির প্রাক্তন সদস্য কিশোর মারোদিয়া বলেন, ‘রেলে হালকা ও উন্নতমানের এলএইচবি কোচ স্থাপন করা হয়েছে। সমস্ত ট্রেনেই তা করা উচিত। তবে সুরক্ষা ও সিগন্যালিং ব্যবস্থায় ‘কবচ’ ব্যবস্থা দ্রুত রূপায়িত দরকার। এখনই কবচ ব্যবস্থার রূপায়ণ করা না গেলে বিকল্প সুরক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করে দুর্ঘটনা এড়াতে হবে।’ রেলের সিগন্যালিং ব্যবস্থা এখনও কেন সর্বত্র স্বয়ংক্রিয় করা যায়নি সেই বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন এই সদস্য।
আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের রেলওয়েজ ইউজার্স কনসালটেটিভ কমিটির সদস্য প্রসেনজিৎ দে বলেন, ‘আমাদের একাধিক বৈঠকে রেলের সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নতিসাধনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু রেলের সুরক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষ করে সিগন্যালিং ব্যবস্থায় গুরুত্ব যথাযথভাবে দেওয়া হচ্ছে না। কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্ঘটনার পর দাবি তুলছি রেলের বরাদ্দে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হয়। সৌন্দর্যায়ন, পার্ক এগুলি পরে করা হোক। আগে যাত্রী সুরক্ষা ও ট্রেনের সিগন্যালিং ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণ করা দরকার। নাহলে দুর্ঘটনা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
এনএফ রেলের কাটিহার ডিভিশনের অধীন জলপাইগুড়ি স্টেশন ইউজার্স কনসালটেটিভ কমিটির সদস্য প্রদীপ দেবের কথায়, রেলের অন্য উন্নয়নমূলক কাজের প্রয়োজন আছে। কিন্তু সবার আগে যাত্রী সুরক্ষা ও যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যবোধের জন্য সার্বিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় গতি আনা উচিত। বিশেষ করে সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ করা খুবই প্রয়োজন।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের তরফে গত বছরের শেষ থেকে চলতি বছরে মে মাস পর্যন্ত সুরক্ষা নিয়ে একাধিক পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। রেলকর্মীদের ত্রুটি পরীক্ষা করা থেকে সেগুলির নিরসন করার মতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন স্টেশনে। একাধিকবার বিভিন্ন স্টেশনে সিগন্যালিং সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছে। এমনকি চলতি বছর জানুয়ারি মাসে উত্তর- পূর্ব সীমান্ত রেল ইলেক্ট্রনিক ইন্টারলকিং, সিস্টেমের উপর বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা কাগজে-কলমে করেছিল মাত্র। কাটিহার ডিভিশনের রায়গঞ্জ ও কালিয়াগঞ্জ ইন্টিগ্রেটেড টাইপ এলইডি বসানো হয়েছে। কিন্তু এতসব পরীক্ষানিরীক্ষা করার পরেও সুরক্ষা ব্যবস্থায় রেল কবচ ব্যবস্থার রূপায়ণ বাস্তবে হয়নি।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে’র দাবি, ‘যাত্রীদের আরামদায়ক ভ্রমণ ও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার বিষয়ে রেল সবসময় কাজ করে যাচ্ছে।’