উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ পা আমাদের শরীরের এমন এক অঙ্গ যার যত্ন আমরা তেমনভাবে নিই না। অথচ আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ভালোমন্দের খোঁজ দিতে পারে পা। ফোলা থেকে অসাড় হয়ে যাওয়া- পায়ের বিভিন্ন সমস্যা আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকেই তুলে ধরে। তাই শারীরিক কোনও জটিলতা এড়াতে চাইলে পায়ের দিকে নজর রাখুন যাতে শুরুতেই রোগ ধরা পড়তে পারে।
পা ফুলে যাওয়াঃ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফলে পা বেশি ফুলতে পারে। নিয়মিত পা ফুলে যাওয়া এডিমা নামে পরিচিত, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি বা লিভারের রোগ এবং হৃদরোগ। শরীরের টিস্যুতে অতিরিক্ত তরল জমার জন্য পা ফুলতে পারে। এমনটা হওয়ার কারণ দুর্বল রক্ত সঞ্চালন বা তরল ধরে রাখা।
স্বাভাবিকভাবে ফোলা কমাতে যখনই সম্ভব পা উঁচু করার চেষ্টা করুন। হাইড্রেটেড থাকুন এবং লবণ কম খান। এছাড়া কমপ্রেশন মোজা রক্ত সঞ্চালন উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে।
স্পাইডার ভেনঃ ছোট, পাকানো রক্তনালি ত্বকের নীচে দেখা যায় যা প্রায়ই উচ্চ মাত্রার ইস্ট্রোজেেনর সঙ্গে যুক্ত থাকে। গর্ভাবস্থা, জন্মনিরোধক বড়ির ব্যবহার বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে এই ধরনের শিরা বিশেষ করে পা ও পায়ের তলায় দেখা যায়। এই ধরনের শিরা সাধারণত কোনও ক্ষতি করে না, তবে অস্বস্তি হতে পারে বা শিরা সংক্রান্ত অপ্রতুলতার ইঙ্গিত হতে পারে।
নিয়মিত শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখলে রক্তপ্রবাহের উন্নতি হতে পারে। সেইসঙ্গে স্পাইডার ভেনের প্রকাশ কমতে পারে। যদি স্পাইডার ভেনের কারণে অস্বস্তি হয় তাহলে চিিকৎসকের পরামর্শ নিন।
পা ফাটাঃ বিশেষ করে গোড়ালির চারপাশ ফাটা বা শুকনো হয়ে যাওয়া প্রসাধনী সমস্যা ছাড়াও আরও বেশি কিছু হতে পারে। এটা ভিটামিন-বি২ ঘাটতির কারণ হতে পারে, যা রাইবোফ্ল্যাভিন নামেও পরিচিত। স্বাস্থ্যকর ত্বক বজায় রাখতে এই ভিটামিন জরুরি। এর অভাবে ত্বক শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ফেটে যেতে পারে।
স্বাভাবিকভাবে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে রাইবোফ্ল্যাভিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, মাংস ও সবুজ শাকসবজি খাওয়া উচিত। এছাড়া ফাটা ত্বক নিরাময়ে ইউরিয়া ও ল্যাকটিক অ্যাসিড রয়েছে এমন ময়েশ্চারাইজার লাগান। অবস্থা গুরুতর হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
পা ঝিনঝিন করা ও অসাড়তাঃ এমন অবস্থা ভিটামিন-বি১২ ঘাটতির প্রাথমিক সতর্কতামূলক লক্ষণ হতে পারে। সাধারণত এই ভিটামিন নার্ভের কার্যকলাপের জন্য জরুরি, কিন্তু এর অভাবে নার্ভের ক্ষতি হতে পারে। ফলে বিশেষ করে হাত-পা ঝিনঝিন করতে পারে বা অসাড় হতে পারে। সুতরাং, এই ভিটামিনের ঘাটতি মেটাতে মাংস, দুধের তৈরি খাবার ও ডিম খেতে হবে। যঁারা নিরামিষ খান তঁাদের ভিটামিন-বি১২ সাপ্লিেমন্ট নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে এবং অসাড়তা কমাতে সাহায্য করে।
ঠান্ডা পাঃ যখন আমাদের বাকি শরীর উষ্ণ থাকে তখন পা ঠান্ডা হওয়ার অনুভূতি যে কোনও ঠান্ডা পরিবেশকেও হার মানায়। এমন অবস্থা আয়োডিনের ঘাটতি বা অ্যানিমিয়ার কারণে হতে পারে। এই দুই সমস্যাই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে শরীরের ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। আয়োডিন থাইরয়েডের কার্যকলাপের জন্য জরুরি। এর ঘাটতি হলে বিপাক ক্রিয়া ধীরে হতে পারে, যা থেকে পা অতিরিক্ত ঠান্ডা হতে পারে। অন্যদিকে, আয়রনের ঘাটতির কারণে অ্যানিমিয়া হতে পারে, যা আপনার রক্তে অক্সিজেন বহনের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে হাত-পা ঠান্ডা হয়।
আয়োডিনের ঘাটতি মেটাতে খাদ্যতালিকায় সিউইড, দুধের তৈরি খাবার ও আয়োডিনযুক্ত লবণ রাখতে হবে। অন্যদিকে, অ্যানিমিয়া রোধে পালং শাক, রেড মিট ও বিনস খেতে পারেন। এছাড়া সঙ্গে সঙ্গে পা উষ্ণ করতে মোজা পরতে পারেন কিংবা ফুট বাথ নিতে পারেন।