বীরপাড়া: এই গরমে যদি জলও ঠিকঠাক পাওয়া না যায়, তাহলে তো চিন্তা বাড়বেই। বীরপাড়াবাসীর বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক এমনই। পানীয় জলের সমস্যা যেন দিনরাত ভাবাচ্ছে সকলকে। শহরের বেশিরভাগ এলাকায় বছরের পর বছর বন্ধ জল সরবরাহ। কয়েকটি এলাকায় ব্যবস্থা থাকলেও নিয়মিত হয় না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। কয়েক বছর আগে বীরপাড়ার একাংশে বসানো নতুন পাইপলাইনে আজও জল সরবরাহ শুরু হয়নি, জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এদিকে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের বীরপাড়া স্টেশন সূত্রে খবর, বীরপাড়ায় পানীয় জলপ্রকল্প ঢেলে সাজানোর কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। বীরপাড়ায় একটি জলাধার রয়েছে। আরও তিনটি নতুন জলাধার তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। একেকটির জন্য খরচ হতে পারে এক কোটি।
বীরপাড়ার ভানুনগরে রয়েছে একমাত্র জলাধারটি। সেখানেই রয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের অফিস। জলাধারটি প্রায় চল্লিশ বছর আগে তৈরি করা হয়। তখন বীরপাড়ার জনসংখ্যা ছিল এখনের চেয়ে অনেক কম। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে জলের চাহিদাও, যা এখন চিন্তার কারণ হয়ে দঁাড়িয়েছে।
বীরপাড়ার দেবীগড় কলোনি, শরৎ চ্যাটার্জি কলোনি, রবীন্দ্রনগর, পুরোনো বাসস্ট্যান্ড চত্বরেও আগে ট্যাপকলের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হত। প্রায় কুড়ি বছর ধরে ওই এলাকাগুলিতে জল সরবরাহ বন্ধ। ট্যাপকলগুলি ভেঙেচুরে গিয়েছে। প্রকল্প সূত্রের খবর, আগে সিমেন্টের পাইপের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হত। বহুবার রাস্তা মেরামত ও পুনর্নির্মাণের সময় পাইপলাইন ভেঙে যায়। পরবর্তীতে নতুন পাইপলাইন বসানো হয়নি।
ক্ষুদিরামপল্লির সিংহভাগ এলাকায় পাইপলাইন নেই। ওই এলাকায় জনবসতি অনেকটাই বিস্তৃত হয়েছে। রেললাইনের উত্তরে হাসপাতালপাড়া, সারদাপল্লি, কলেজপাড়া, সুভাষপল্লি এলাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে এখনও জল সরবরাহ করা হয়। অনেক পরিবারের বিরুদ্ধে আবার বেআইনিভাবে পাম্প লাগিয়ে মূল পাইপলাইন থেকে জল টেনে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে বেশ কয়েকটি বাড়িতে সরকারি উদ্যোগে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হলেও সেগুলি এখনও চালু করা হয়নি।
পাইপলাইন থাকলেও সুভাষপল্লি, ভানুনগর, কলেজপাড়া, সারদাপল্লির বহু জায়গায় ট্যাপকল নেই। অনেক জায়গায় মূল পাইপলাইনে সরু পাইপ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলিকে ট্যাপকল হিসেবে ব্যবহার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মোতিমিলের ব্যবসায়ী সুশীল বর্মন বলেন, ‘কোনওদিন একবার বা দু’বার জল সরবরাহ করা হয়। আমি পাশের একটি বাড়ি থেকে জল নিয়ে ব্যবহার করি।’
ছয় বছর আগে কলেজ রোড পুনর্নির্মাণের পর পাইপলাইন অনেক নীচে চলে যায়। মোতিমিলে পাইপলাইন থেকে একটি ছোট পাইপ বের করে রাখা হয়েছে। ওই পাইপ থেকে জল নিতে নিকাশিনালায় নামতে হয় স্থানীয়দের। দোকানদার জগদীশ বর্মন বলেন, ‘আট বছর ধরে এভাবেই দূষিত জল ব্যবহার করছি।’ কলেজপাড়ার উত্তরাংশেও পাইপলাইন নেই। ওই এলাকার িক্ষতীশ সাহা বলেন, ‘আমরা কবে সরকারি প্রকল্পের জল পাব জানি না।’ বিরবিটি এলাকায় এখনও পাইপলাইন পাতা হয়নি। এলাকার সনৎ শীলের কথায়, ‘জল সরবরাহ ব্যবস্থাই মুখ থুবড়ে পড়েছে।’
রেললাইনের দক্ষিণাংশে রেলস্টেশন লাগোয়া এলাকায় একই ছবি। প্রকল্পের বীরপাড়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অর্ণব সাধুখাঁ বলেন, ‘২০২৪ সালের মধ্যেই কাজ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে এগোনো হচ্ছে। জলাধারগুলি তৈরির কাজ শেষ হলেই নতুন পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু হবে।’