দীপঙ্কর মিত্র, রায়গঞ্জ: আরবে শ্রমিকের কাজ করেন। আবার তিনিই শিল্পী ভাতাও পান নিয়মিত। বুধবার এহেন এক পরিযায়ী শ্রমিকের জন্য কর্ণজোড়ায় জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরে লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতে আসেন তাঁর বাবা সেরেফুল। শুধু তিনি নন, এরকম আরও উদাহরণ রয়েছে জেলাজুড়ে।
কেউ বিবাহিত, কেউ ভিনরাজ্যে কর্মরত। ‘টুকটাক’ কীর্তন করেন কেউ। কেউ আবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের নিয়মিত প্রাপক। তাঁরা প্রত্যেকেই শিল্পী ভাতা পান। প্রকৃত শিল্পীদের একাংশের অভিযোগ, যাঁরা শিল্পের সঙ্গে কোনওভাবেই যুক্ত নন, তাঁরা এই ভাতা নিচ্ছেন। অথচ যাঁরা প্রকৃত শিল্পী, তাঁদের ভাগ্যে জুটছে না ভাতা।
ইটাহারের কাশিমপুরের সেরেফুল ইসলামের বক্তব্য, ‘ছেলে জাহাঙ্গির আরবে থাকে। ওর লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতে এসেছি। অফিসার বলছে, ছেলেকেই আসতে হবে। গ্রামে গিয়ে নেতাদের বলব।’ তাঁর দাবি, ‘ছেলে, আমি ও আমার স্ত্রী শিল্পী ভাতা পাই। আমরা গজল করি।’ এছাড়াও এনামুল হক, কাইজার আলম সহ অনেকে ছেলেদের শিল্পীভাতার জন্য লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতে আসেন। তাঁদের ছেলেরা সবাই বিদেশে শ্রমিকের কাজ করেন।
ইটাহার থেকে এসেছিলেন দীপ্তি বর্মন। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু এখানে শিল্পীভাতা পান। তাঁর লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতে এসেছিলেন। সার্টিফিকেট জমা নেননি কর্মীরা। অনেকে আবার ছেলেমেয়েদের শিল্পী কার্ড করার জন্যও আসেন। বারোদুয়ারির নিরানন্দ বর্মনের বক্তব্য, ‘মাঝেমধ্যে কীর্তন করি। ভাতা পাচ্ছি অনেকদিন ধরে।’ ছটপড়ুয়ার সুরেন বর্মনের সাফ কথা, ‘অভিনয় করি বলে ভাতা পাই।’ এদিকে, দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের সুরবালা বর্মন, সুমিত্রা বর্মন সহ আরও অনেকে জানান, শিল্পী ভাতার পাশাপাশি লক্ষ্মীর ভাণ্ডারও পাচ্ছি। কৃষিকাজ ছাড়াও কীর্তন করি অবসর সময়ে। খোকসার হারাধন বর্মনের কথায়, ‘কীর্তনে খোল বাজাই বলে ভাতা পাই।’
প্রশ্ন উঠেছে একই ব্যক্তি কীভাবে একসঙ্গে লোকশিল্পী ভাতা ও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পেতে পারেন? রায়গঞ্জের নট্টপাড়ার বাদ্যকার অজয় নট্টের অভিযোগ, ‘যারা লোকশিল্পী ভাতা পাচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশই শিল্পী নন। এঁরা ভিন্নপথ অবলম্বন করে লোকশিল্পী কার্ড করে নিয়ে ভাতা পাচ্ছেন।’ মাখন নট্ট নামে আরেক বাদ্যকরের দাবি, ‘আমরা প্রকৃত শিল্পী হওয়া সত্ত্বেও ভাতা পাচ্ছি না। আবার অনেকে একসঙ্গে লোকশিল্পীর পাশাপাশি অন্য ভাতাও নিচ্ছেন।’
জেলার ৯টি ব্লকে প্রায় ১৪ হাজার জন শিল্পীভাতা পান। যদিও জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক শুভম চক্রবর্তী জানান, যিনি বা যাঁরা শিল্পী ভাতা পান তাঁদের অফিসে এসে লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। কেউ এসে অন্যের সার্টিফিকেট জমা দিতে পারবে না। আমরা সই মিলিয়ে দেখছি।