নীহাররঞ্জন ঘোষ, মাদারিহাট: গত কয়েকবছর ধরে কম বৃষ্টিপাতের কারণে তোর্ষা এবং হলং নদীতে জলের পরিমাণ অনেকটাই কম। এতেই খাদ্যসংকট তীব্র আকার ধারণ করতে চলেছে জলদাপাড়ায় (Jaldapara National Park)! খাবার পাবে না সেখানকার তৃণভোজী প্রাণীরা।
কিন্তু ভারী বৃষ্টি (Heavy Rain) না হওয়ার সঙ্গে জলদাপাড়ায় খাদ্যসংকটের সম্পর্ক কী? পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, ভারী বৃষ্টি হলে নদী থেকে জল উপচে পাড়ের দু’দিকে জমে পলিমাটি। সেই পলিমাটিতে যে ঘাস জন্মায় তা তৃণভোজী প্রাণীদের সবচেয়ে প্রিয় খাবার। কিন্তু গত কয়েকবছরে বৃষ্টির পরিমাণ কম হওয়ার জন্য পলিমাটি কম জমা পড়েছে। অন্যদিকে, জলদাপাড়ার মাটির চরিত্রও অনেক বদলে গিয়েছে বলে জানালেন তাঁরা।
যদিও উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল ভাস্কর জেভি জানালেন, নদীর গতিপথের চরিত্রেও বদল ঘটেছে। দেখা যাচ্ছে, জলদাপাড়ার একটা বড় অংশে বৃষ্টির জল ঢুকছে না। জল চলে যাচ্ছে শিসামারার দিকে। তিনি বলেন, ‘তোর্ষা নদীর গতিপথ প্রতিবছর পরিবর্তন হচ্ছে। জলদাপাড়ার মূল ভূখণ্ডের দিকে না এসে চলে যাচ্ছে যেদিকে জঙ্গলের পরিমাণ কম সেদিকে।’ ওই এলাকাটি জলদাপাড়ার অংশ হলেও তৃণভোজী প্রাণী, বিশেষ করে গন্ডারের আবাসস্থল ওই অংশে কম রয়েছে বলে জানান। ভাস্করের কথায়, ‘জলপ্রবাহের নিয়ন্ত্রণ আবার আমাদের হাতে নেই। সেজন্য আমরা ঘাসের প্ল্যান্টেশন বাড়িয়েছি।’ তবে পর্যাপ্ত বৃষ্টির জল না ঢুকলে ভবিষ্যতে খাদ্যসংকট দেখা দেবে কি না এই ব্যাপারে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
জলদাপাড়ার বিশিষ্ট গাইড কল্যাণ গোপ বহু বছর ধরে গাইডের কাজ করছেন। জলদাপাড়ার ভৌগোলিক পরিবেশ তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। তিনি জানান, বৃষ্টিপাত কম হওয়ার জন্য জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে প্রাকৃতিক নিয়মে জন্মানো ঘাস খুব কম হচ্ছে। পরিবর্তে আগাছা এবং গুল্ম জাতীয় গাছে ভরে যাচ্ছে তৃণভূমির বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বন্যা হলে বা অতিবৃষ্টি হলে জলের সঙ্গে যে পলিমাটি আসে সেই মাটিতে ঘাস সবচেয়ে বেশি জন্মায়। সেসব কম হওয়ার জন্য নদীর নাব্যতা কমে যাওয়াকে তিনি দায়ী করেছেন। আর এইসবের জন্য সবচেয়ে বড় দোষী মানুষ।
তাঁর আশঙ্কা, ‘যেভাবে বন্যপ্রাণীদের সংখ্যা বিশেষ করে তৃণভোজীদের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে বিকল্প চিন্তাভাবনা না করলে খুব বিপদ ঘনিয়ে আসছে। পথেঘাটে ঘুরে বেড়াবে গন্ডার, বাইসন, হরিণের দল। প্রতিবছর আগাছা পরিষ্কার করা হয়, যাতে প্রাকৃতিক নিয়মে ঘাস জন্মায়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ঘাসের তুলনায় আগাছার পরিমাণই বেশি।’
ন্যাফের কোঅর্ডিনেটর অনিমেষ বসুও একই কথা জানালেন। পলিমাটি যত বেশি জমা পড়বে, ততই বন্যপ্রাণীদের মঙ্গল। গত কয়েকবছর ধরে তোর্ষা এবং হলংয়ে বৃষ্টি কমই হচ্ছে। এদিকে, এই নদী দুটিই জলদাপাড়ার প্রাণভোমরা।
জলদাপাড়ায় প্রায় সাড়ে তিনশো গন্ডার, কয়েক হাজার বাইসন এবং হরিণ রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ৮৫টি কুনকি হাতি এবং প্রায় ১০০টি জংলি হাতি। জলদাপাড়ার মোট আয়তনের মাত্র ৪০ শতাংশ তৃণভূমি রয়েছে। কোভিডের দুই বছরে এক ইঞ্চি জমিতেও ঘাসের প্ল্যান্টেশন করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর নতুন ঘাসের প্ল্যান্টেশন করা প্রয়োজন। নাহলে তার প্রভাব পরবর্তী বছরগুলিতে পড়বে।

