নীহাররঞ্জন ঘোষ, মাদারিহাট: অফলাইনে টিকিট দেওয়ার নিয়ম চালু হতেই শুরু হয়েছে হাজারও সমস্যা। ফলে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে (Jaldapara National Park) ঘুরতে আসা পর্যটকদের প্রতিনিয়ত হয়রান হতে হচ্ছে। কার সাফারি ও এলিফ্যান্ট রাইডের টিকিটের জন্য দীর্ঘসময় কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। অনেকে আবার সারাদিন লাইন দিয়েও টিকিট পাচ্ছেন না। এমনকি সম্প্রতি টিকিটের লাইন দেওয়াকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লে মাদারিহাট থানার পুলিশকে (Madarihat Police) এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। পুরো ঘটনায় পর্যটকরা বন দপ্তরের ওপর ভয়ানক ক্ষুব্ধ।
গত ২৭ ডিসেম্বর হঠাৎই বিনা নোটিশে অনলাইনের বদলে অফলাইন টিকিট বুকিংয়ের ব্যবস্থা চালু হয়। প্রথম অবস্থায় সমস্যা না হলেও জানুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই ভিড় বাড়তে থাকে কাউন্টারে। রবিবার দুর্গাপুর থেকে জলদাপাড়া ঘুরতে এসেছিলেন দেবাশিস নন্দী। তিনি জানালেন, সকাল ১০টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কাউন্টার খুলেছে ১২টায়। বলা হয়, সেখানে শুধুমাত্র বেলা দেড়টার কার সাফারির জন্য টিকিট দেওয়া হবে। আর বিকাল সাড়ে তিনটার কার সাফারির টিকিট দেওয়া হবে দুটো থেকে। আবার হাতি রাইডিংয়ের টিকিট দেওয়া হবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে।
তাঁর কথায়, ‘এইভাবে নিয়মের জাঁতাকলে পড়ে আমাদের একটা দিন নষ্ট হয়ে গেল। অথচ একসঙ্গেই যদি সবগুলি টিকিট দেওয়া হত তবে এইভাবে হয়রান হতে হত না।’ একই সমস্যায় পড়তে হয়েছে কোচবিহার থেকে ঘুরতে আসা টুম্পা গুহদেরও। এর জেরে কালোবাজারি বা দালালচক্র সক্রিয় হয়ে ওঠার আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গাইড জানালেন লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে প্রায়ই হাতাহাতি হচ্ছে পর্যটকদের মধ্যে। সমস্যায় পড়ছেন বয়স্ক এবং মহিলারা। তাঁর কথায়, ‘আমরাও চাই অনলাইন টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা আবার চালু হোক।’
এবিষয়ে মাদারিহাট প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের রেঞ্জ অফিসের মণীন্দ্র মহন্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে টিকিট বুকিংয়ের ব্যবস্থা থাকায় সকলেরই খুব সুবিধা হত। আমরাই এই ব্যবস্থা একটি সংস্থার মাধ্যমে চালু করেছিলাম। হঠাৎই সেই সংস্থা কেন এটা বন্ধ করল জানিনা। তবে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওই সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে বলে শুনেছি।’
অন্যদিকে, জলদাপাড়ায় এলিফ্যান্ট রাইড নিয়েও সমস্যা শুরু হয়েছে। বর্তমানে ওখানে রাইডিংয়ের জন্য পাঁচটি হাতি বরাদ্দ রয়েছে। এরমধ্যে ডায়না নামের হাতিটি বর্তমানে ছুটিতে। কারণ তার মাহুত বিনোদ ওরাওঁ মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। সম্প্রতি মাদারিহাট রেঞ্জ অফিসের কোয়ার্টারে যে দুই খুন ও একজন আত্মঘাতী হয়েছিলেন তাঁরা ছিলেন বিনোদের মা, ছেলে ও ভাই। সেইজন্য বিনোদকে রাইডিংয়ে পাঠানোর ঝুঁকি আপাতত নিচ্ছেন না বনকর্তারা। আর একটি হাতিকে প্রায়ই রিজার্ভে রাখতে হচ্ছে ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের জন্য। ফলে বেশিরভাগ সময় তিনটি হাতির টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। শুধুমাত্র সকালে তিনটি ট্রিপে তিনটি হাতির পিঠে চড়তে পারবেন ৩৬ জন। কিন্তু সেখানে চাহিদা থাকে প্রায় ৫০ জনের।