নাগরাকাটা: রাজবংশী, মতুয়া, আদিবাসী ও গোর্খা সম্প্রদায়ের ভোটে বলীয়ান হয়েই কি জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার এই দুটি কেন্দ্রে জয় ছিনিয়ে নিল পদ্ম ব্রিগেড? এখনই এর সরাসরি কোনও উত্তর নেই। তবে প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, পুরোনো মার্জিন অনেকটা কমে গেলেও রাজ্যের অন্য কেন্দ্রগুলির মতো এখানে বিজেপি যে ওই সম্প্রদায়দের ভোট একেবারে হারায়নি তা ফলাফলেই স্পষ্ট (Lok Sabha Election Result 2024)।
জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) আসনে রাজবংশী ভোট অন্যতম নির্ণায়ক ফ্যাক্টর। তাঁদের মন জয়ে চেষ্টার কোনও কসুর করেনি তৃণমূল। একই কথা প্রযোজ্য মতুয়াদের ক্ষেত্রেও। আদিবাসী ও গোর্খা ভোটাররা মূলত চা বাগান ও বনবস্তি এলাকার বাসিন্দা। দলের নেতৃত্বে ওই দুই সম্প্রদায় থেকে সংগঠনে একাধিক নয়া মুখ এনেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। মাটি কামড়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন মালবাজারের বিধায়ক ও রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক। বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম, মাদারিহাট ও নাগরাকাটা এই তিন বিধানসভা আসনে আদিবাসী বিধায়ক রয়েছেন। কালচিনিতে তাদের বিধায়ক গোর্খা সম্প্রদায়ের। ডুয়ার্সে সবচেয়ে বেশি গোর্খা ভোটার কালচিনিতেই। সেখান থেকেও উত্তুঙ্গ লড়াইয়ের এই নির্বাচনি ময়দানে বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গা লিড পেয়েছেন। ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, একমাত্র নাগরাকাটা ছাড়া আদিবাসী অধ্যুষিত কুমারগ্রাম ও মাদারিহাট থেকেও লিড মনোজেরই। বিপুল সংখ্যক রাজবংশী ভোটার রয়েছেন আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) ফালাকাটা, তুফানগঞ্জ কিংবা জলপাইগুড়ির মেখলিগঞ্জ, ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি সদর, রাজগঞ্জ ও ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা আসনে। এর মধ্যে মেখলিগঞ্জ ও রাজগঞ্জ ছাড়া বাকি কেন্দ্রগুলি থেকে বিজেপি প্রার্থী ডাঃ জয়ন্ত রায় লিড পেয়েছেন। এর মধ্যে সবথেকে বেশি লিড রয়েছে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি থেকে। সেখানে তৃণমূলের ডঃ নির্মলচন্দ্র রায়ের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৮৩,৫৩৭। অন্যদিকে ডাঃ জয়ন্ত রায় পেয়েছেন ১,৫৫,৬৯৯ ভোট। জলপাইগুড়ি বিধানসভা আসনও বিজেপিকে ভালো লিড দিয়েছে। সেখানে তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা যথাক্রমে ৮৩,২০৪ এবং ১,০৯,৩৪৩।
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের আলিপুরদুয়ার শাখার সম্পাদক নির্মলকুমার বালা বলেন, ‘আমাদের সম্প্রদায়ের ভোট কতটা কার বাক্সে গিয়েছে তা বলা সম্ভব নয়। তবে এটুকু বলতে পারি, মতুয়াদের সিংহভাগই শাসকদলের সমর্থক।’ অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য কমিটির সভাপতি বিরসা তিরকি বলেন, ‘আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনি মেশিনারি সম্ভবত সঠিকভাবে কাজ করেনি। আমাদের আদিবাসী সম্প্রদায়দের মানুষজনের সঙ্গে দলের নেতাদের সৌহার্দ্যের সম্পর্ক গড়ে তুলতে নিশ্চয় কোথাও কোনও ফাঁক ছিল।’ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ডুয়ার্সের অন্যতম শীর্ষ নেতা শিবু সুনুয়ার বলছেন, ‘দুই আসনে বিজেপি জিতেছে মানেই বিশেষ কোনও একটি সম্প্রদায় তাঁদের ভোট দিয়েছে, এমনভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। ওঁদের জয়ের পেছনে আরও নানা কারণ থাকতে পারে।’