শুভাশিস বসাক, ধূপগুড়ি: কসবা ধর্ষণ কাণ্ডের রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে জেলাজুড়ে বিক্ষোভ ও থানা ঘোরাও কর্মসূচি পালন করছে বিজেপি। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে তারা। এদিকে, জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) ধূপগুড়ি (Dhupguri) ব্লকের একটি নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনায় সেই বিজেপিরই এক নেতা আবার টাকা দিয়ে মিটমাট করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি একটি ভাইরাল ভিডিওতে বিজেপির পূর্ব মণ্ডল কমিটির সদস্য এবং পেশায় শিক্ষক রঞ্জিত বর্মনকে ঘটনা মিটমাট করার জন্যে টাকার প্রস্তাব দিতে দেখা গিয়েছে। যদিও সেই ভিডিও’র সত্যতা যাচাই করেনি উত্তরবঙ্গ সংবাদ। নাবালিকা ধর্ষণের পাশাপাশি এই টাকা দিয়ে মিটমাটের চেষ্টার অভিযোগ নিয়েও এলাকায় তুলকালাম চলছে। যদিও অভিযুক্ত বিজেপি নেতা রঞ্জিত বলেন, ‘মীমাংসা করতে যাইনি। আমরাই নির্যাতিতার পাশে দাড়িয়েছি।’
সেই নিগৃহীতার মা অবশ্য মিটমাটের প্রস্তাব মানেননি। তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত ধরাও পড়েছে। সেই নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তারই কাকার বিরুদ্ধে। শনিবার ১১ বছরের সেই নাবালিকা জমি থেকে গবাদিপশু নিয়ে বাড়ি আসছিল। তখন সেই নাবালিকার বাবার খুড়তুতো ভাই তাকে জোর করে বাড়ির পেছনে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যায় ও ধর্ষণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। চোখে পড়ে যায় নাবালিকার মায়ের। তিনি ছুটে এসে মেয়েকে রক্ষা করেন। ঘটনার পরেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন নাবালিকার মা। তিনি চোখের সামনে দেখা ঘটনা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। রাত প্রায় দেড়টা নাগাদ অভিযোগ দায়ের হতেই পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে।
জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপত বলেন, ‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। একজন ধরা পড়েছে। আর কেউ পকসো মামলায় মিটমাট করতে চাইলে তার বিরুদ্ধেই পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার পর রঞ্জিত মিটমাট করার জন্যে টাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, রঞ্জিত বলছেন, ‘দুই হাজার, পাঁচ হাজার নিলে একটা তো মীমাংসা হত। এমনও হতে পারে, ৫০ হাজার টাকা মেয়েটির নামে ফিক্সড করে দিলে বিয়ের সময় কাজে লাগবে।’
এই প্রস্তাব মানতে প্রথম থেকেই নারাজ ছিলেন নাবালিকার মা। মায়ের কথায়, ‘একজন কাকা তার ভাইঝির সঙ্গে এমনটা করতে পারে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।’
একই দাবি করেছেন নাবালিকার জেঠুও। তাঁর কথায়, ‘বাচ্চা মেয়েটি বাড়ির কাজ করছিল। সেই সুযোগে নিজেদেরই আত্মীয় এমন ঘটনা ঘটাবে তা ভাবতে পারছি না।’
রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চাপানউতোরের খেলা। বিজেপির পূর্ব মণ্ডলের সভাপতি বসন্তকুমার রায় বলেন, ‘এই ধরনের কাজ বিজেপি কর্মীরা করে না। তবে ঘটনা খতিয়ে দেখে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে বারোঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আবু তাহের বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। এভাবে একটি ঘটনায় মীমাংসা করে টাকা নেওয়ার কথা মানা যায় না। অত্যন্ত নোংরা ঘটনা ঘটেছে। পুলিশকে নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীকে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে।’