অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: একদিনের খাদ্যমেলার আয়োজন করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সেখানে একদিকে দেখা মিলল বিভিন্ন চাইনিজ খাবার, বাঙালির প্রিয় পিঠেপুলির। আরেকদিকে রাজবংশী সম্প্রদায়ের নানা রকমের পদ। ট্রেন্ডিং খাবারের সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসা বিভিন্ন পদের এই মিশেলে জিভে জল এল উপস্থিতদের।
একদিনের এই খাদ্যমেলার আয়োজন করেছিল জলপাইগুড়ির প্রসন্নদেব মহিলা মহাবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ (Jalpaiguri)। খাদ্যমেলাকে ঘিরে পড়ুয়া থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে উদ্দীপনা ছিল তুঙ্গে। এবছর খাদ্যমেলার দ্বিতীয় বর্ষ। কলেজের প্রতিটি বিভাগের ছাত্রীরা স্টলে নানাধরনের খাবারের সম্ভার নিয়ে বসেছিলেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল রাজবংশী খাবারের দোকানে।
এরকমই শিদল, ছ্যাকা নিয়ে স্টল দিয়েছিলেন শারীরশিক্ষার চতুর্থ সিমেস্টারের পড়ুয়া অঙ্কিতা দাস। তিনি বললেন, ‘আমাদের দলে ১০ জন ছিলাম। এখন চাইনিজ, মোগলাই, বিরিয়ানির দাপটে ধীরে ধীরে হারাতে বসেছে রাজবংশী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবহনকারী খাবারগুলো। তাই ঠিক করি, আমরা সেইসব হারিয়ে যেতে বসা খাবারগুলোরই স্টল দেব।’ সেইমতো গ্রাম থেকে আসা মেয়েরা বাড়িতে থাকা জিনিস দিয়ে এই ধরনের খাবার বানিয়ে নিয়ে আসেন। অঙ্কিতাদের স্টলে শুধু রাজবংশী পদই ছিল না, ছিল বকফুল, সর্ষেফুলের বড়া, পাটিসাপটা, মালপোয়া, ভাপা পিঠেও। প্রতিটি খাবারের দামই ৫-১৫ টাকার মধ্যে।
শিদল বানিয়ে স্টলে বিক্রি করছিলেন কলেজের ষষ্ঠ সিমেস্টারের মুর্শিদা পারভিন। তাঁর কথায়, ‘সবাই খাবারগুলো খুব তৃপ্তি করে খেয়েছিলেন। দারুণ অভিজ্ঞতা হল এই ধরনের মেলায় স্টল দিতে পেরে।’
জলপাইগুড়ি প্রসন্নদেব মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ডঃ সমাপ্তি সাহা জানান, প্রথম বছর ছোট করে খাদ্যমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এবার বড় করে মেলার আয়োজন করা হয়। তাঁর কথায়, ‘আমাদের কলেজের মেয়েরা যে পড়াশোনা, হস্তশিল্পের পাশাপাশি রান্নাতেও পারদর্শী, সেটা আরেকবার প্রমাণিত হল। এই ধরনের খাদ্যমেলার মূল উদ্দেশ্য হল অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হওয়ার রাস্তা দেখানো।’ এখন অনেকেই ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাঁদের কথা ভেবেই এই ধরনের উদ্যোগ।
কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ইউনিটের অবজার্ভার মিষ্টি সিংও একই কথা বলেন। ছাত্রীদের স্বনির্ভর করার পথ দেখাতে এই আয়োজন। এদিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি গৌরব ঘোষ, কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি তপনকুমার মিত্র সহ আরও অনেকে। এই খাদ্যমেলার পাশাপাশি ২০২৪-’২৫ শিক্ষাবর্ষের ম্যাগাজিনও বিতরণ করা হয়।