শুভদীপ শর্মা, ময়নাগুড়ি : সাহিত্যে নোবেলজয়ী মরিস মেটারলিংকের কালজয়ী নাটক ‘দ্য ব্লু বার্ড’-এর ভাইবোন মিতিল আর তিলতিল সুখের প্রতীক নীল পাখির খোঁজে বেরিয়েছিল। তারা বুঝতে পারেনি সুখের সেই পাখির বাস তাদের ঘরেই। ময়নাগুড়ি ব্লকের বড়গিলা গ্রামের খালপাড়ার বাসিন্দারা কিন্তু সেই ‘সুখ’ খুঁজে নিয়েছেন নিজেদের গ্রামেই। তাঁদের ভালোবাসায় ধরা পড়েছে পাখিরা।
ময়নাগুড়ি শহর থেকে কিলোমিটার আটেক দূরে খালপাড়া গ্রাম। দশক চারেক আগে গ্রাম থেকে রাখালহাটে যাওয়ার কাঁচা রাস্তার ধারে থাকা বাঁশঝাড়ে আশ্রয় নেয় কয়েকটি বক। স্থানীয় গ্রামবাসীরা সেই থেকেই ওই বকদের যাতে কেউ বিরক্ত না করে সেদিকে কড়া নজর রাখতেন। এমনকি গ্রামে থাকা ওই বাঁশঝাড় কেউ কাটেননি আজ পর্যন্ত।
এমিন করেই কেটেছে বছরের পর বছর। হাতেগোনা কয়েকটি বক আজ সংখ্যায় বেড়ে কয়েকশো। আর শুধু বক নয়, পানকৌড়ি, মাছরাঙা, নাইট হেরন, শালিক, কাক সহ নানা পাখির আশ্রয়স্থল এই গ্রাম। গ্রামের বাসিন্দা রতন রায়, জীবন রায়রা জানান, প্রতিবছর বৈশাখ মাস নাগাদ গ্রামে একে একে হাজির হয় পাখির দল। গ্রামের বাঁশ বাগানে আশ্রয় নেয় তারা। কয়েকমাস ধরে ঘর বানিয়ে বাচ্চার জন্ম দেয়। তাদের লালনপালন করে বড় করে তোলে। তারপর কেউ পাড়ি দেয় নিজেদের পুরোনো ঠিকানায় আর কেউ থেকে যায় গ্রামে পাকাপাকিভাবেই।
স্থানীয় গ্রামবাসী দুলাল রায়, দেবেশ রায়রা জানান, আগে গ্রামে পাখিদের আস্তানার কথা শুনে পাখিশিকারিরা ভিড় জমাত। তবে গ্রামবাসীদের বাধায় কোনওদিন গ্রামে পাখি শিকার করতে পারেনি তারা। তখন থেকেই পাখিদের রক্ষায় বদ্ধপরিকর গোটা গ্রাম। এভাবে দিনের পর দিন গ্রামবাসীর ভালোবাসা পেয়ে পাখিদের স্থায়ী ঠিকানা হয়ে গিয়েছে খালপাড়া।
স্থানীয় স্কুল পড়ুয়া রূপেশ রায় জন্ম থেকেই পাখিদের প্রতি একটা টান অনুভব করে। রূপেশ জানায়, কেমন যেন আত্মীয়তা তৈরি হয়ে গিয়েছে ওদের সঙ্গে। সেই জানাল, সাতসকালে দলে দলে ওরা দূরদূরান্তের জলাশয়ে চলে যায়। সারাদিন খাবার জোগাড় করে সূর্যাস্তের আগেই ফিরে আসে। প্রতিদিন ভোরে পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে থাকে গোটা গ্রাম।
জলপাইগুড়ি বন বিভাগের ডিএফও বিকাশ ভি বলেন, ‘পাখি সংরক্ষণে গ্রামের এই উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। আগামীতে গ্রামে আসা পাখিদের দেখতে যাব।’