শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: মরশুমের শেষে জলের দরে কাঁচা পাতা (Tea Leaves) বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ। ক্ষুদ্র চা চাষিদের অভিযোগের তির বটলিফ ফ্যাক্টরিগুলির দিকে। অভাবী চাষিদের দাম কমাতে বাধ্য করিয়ে কিলোপ্রতি দর আট-নয় টাকা করে গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি। যদিও বটলিফ ফ্যাক্টরিগুলি তাঁদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ মানতে নারাজ। এই নিয়ে দু’পক্ষের দ্বৈরথ এখন তুঙ্গে উঠেছে। জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri News) জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘পুজোর পর থেকে কাঁচা পাতার দামের পতন অব্যাহত। শেষ বাজারে এসে এখন তা মাত্রাতিরিক্ত। আগে যে পাতা ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল দু’মাসের মধ্যে এমন কী ঘটল যে দাম আট-নয় টাকায় নেমে আসবে। অথচ বটলিফ ফ্যাক্টরির তৈরি করা চায়ের নিলাম মূল্য কিন্তু কমেনি। এসব ওঁদের কারসাজি ছাড়া আর অন্য কিছু নয়।’ টি বোর্ডও নীরব দর্শকের ভূমিকায়। উত্তরবঙ্গজুড়ে ক্ষুদ্র চা চাষিরা এখন অস্তিত্ব সংকটে। বটলিফের সংগঠন নর্থবেঙ্গল টি প্রোডিউসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জয় ধানুটি জানান, যে চায়ের উৎপাদন খরচ কিলোপ্রতি ২১০ টাকা তা আমাদের ১৫৫ টাকা করে নিলামে বিক্রি করতে হচ্ছে। পাশাপাশি এখন ক্ষুদ্র চাষিদের কাছ থেকে যে কাঁচা পাতা আসছে সেগুলির গুণগতমান ভালো নয়। তবু আট-নয় টাকা দর দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ একেবারেই ঠিক নয়। অন্তত আমরা ওই দামে কাঁচা পাতা পাচ্ছি না।
চা মহল সূত্রে খবর, টি বোর্ডের নির্দেশিকা অনুসারে আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে এবারের মরশুম শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেদিন কাঁচা পাতা তোলার শেষ দিন। এরপর কবে নতুন মরশুম শুরু হবে সে ব্যাপারে এখনও কোনও ঘোষণা করা হয়নি। জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সভাপতি রজত রায় কার্জির কথায়, ‘আগেভাগে মরশুম শেষ করে দিয়ে কী লাভ হল বোধগম্য নয়। ক্ষুদ্র চা চাষিরা পরিস্থিতি দেখে বাগান তুলে দেওয়ার কথা বলছেন। মাঝখান থেকে বটলিফ ফ্যাক্টরিগুলি মুনাফা করে নিল।’
এদিকে টি বোর্ডের সদ্য প্রকাশিত খসড়া রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবরে উত্তরবঙ্গে চায়ের মোট উৎপাদন ৫৭.৩৭ মিলিয়ন কিলোগ্রাম ছিল। যা গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় সামান্য কম (৫৭.৬৮ মিলিয়ন কিলোগ্রাম)। তবে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ধরলে মোট উৎপাদনে উত্তরবঙ্গ এখনও গতবছরের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। গত বছর প্রথম ১০ মাসের উৎপাদন ৩৫৩.৭৬ মিলিয়ন কিলোগ্রাম ছিল। এবার সেটা ৩১৬.০১ মিলিয়ন কিলোগ্রামে দাঁড়িয়েছে। কমার পরিমাণ ৩৭.৭৫ মিলিয়ন কিলোগ্রাম। তবে গোটা দেশের নিরিখে এবারের অক্টোবরের উৎপাদন গতবারের থেকে বেড়েছে। ২০২৩ সালে ওই পরিমাণ ছিল ১৮৮.২৬ মিলিয়ন কিলোগ্রাম। ২০২৪-এর অক্টোবরে যা বেড়ে ১৯৮.৬০ কিলোগ্রামে দাঁড়িয়েছে।