সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি: দেবী অন্নপূর্ণাকে সামনে পেয়েও ঈশ্বরী পাটনি সন্তানের ‘দুধে ভাতে’ থাকার নিশ্চয়তা ছাড়া আর কিছুই চাইতে পারেননি। সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের স্নেহ এমনই। সন্তানের সুখে নিজের শান্তি খুঁজেই বছর পাঁচেক আগে মেয়ের প্রেম করে বিয়ে মেনে নিয়েছিলেন ঠাকুরপাটের সন্ধ্যা রায়। বিয়ের পর বছর তিনেক ঠিকঠাক চললেও গোল বাঁধে জামাই জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri News) ধূপগুড়িতে (Dhupguri) এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতে আসার পরেই। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ এবং সম্পর্ক গড়ে ওঠে এক তরুণীর। এর জেরে মেয়ে-জামাইয়ের সম্পর্কের অবনতি এবং সংসারে অশান্তি টের পাচ্ছিলেন সন্ধ্যা। মঙ্গলবার দুপুরে ধূপগুড়ি পুর বাস টার্মিনাস সংলগ্ন এলাকায় জামাইয়ের চায়ের দোকানে অতর্কিতে হানা দিয়ে প্রেমিকা সহ জামাইকে পাকড়াও করেন শাশুড়ি। এরপরই শুরু হয় প্রেমিকা সহ জামাইকে বেধড়ক জুতোপেটা।
মাঝবয়সি এক মহিলা বাস টার্মিনাসে দোকানের সামনে যুগলকে বেধড়ক মারধর করায় মুহূর্তে ভিড় জমে যায় চারপাশে। শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে হাজির হয় ধূপগুড়ি থানার পুলিশ (Dhupguri Police)। শাশুড়ি, জামাই ও তাঁর প্রেমিকা তিনজনকেই থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয় দোকানি অসিত দত্ত বলেন, ‘কিছুদিন যাবৎ ওই তরুণী এবং তরুণ এখানে চায়ের দোকান চালান। তাঁদের সম্পর্ক জানতে চাইলে ভাইবোন বলে পরিচয় দিতেন। তবে দুজনের চলাফেরায় সন্দেহ ছিল আমাদের সকলেরই। আজকের ঘটনায় সেই সন্দেহই সত্যি হল।’
জামাই ধূপগুড়ি ব্লকের গাদংয়ের কাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বছর পাঁচেক আগে ঠাকুরপাট এলাকার তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জেরে বিয়ে হয় তাঁর। যুগলের এখনও কোনও সন্তান নেই। এদিকে বছর দুয়েক আগে শহরের চৌপথি মোড় এলাকায় কাজ করতে এসে স্থানীয় মধ্যপাড়ার বাসিন্দা এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই সন্তানের মা ওই তরুণীর স্বামী নেই।
তরুণের স্ত্রী ও শাশুড়ির দাবি, জামাই ও তরুণী দুজনেই একসঙ্গে কাজ বদলায় আবার নতুন কাজে ঢোকে। এনিয়ে বারবার বলা হলেও কাজ হয়নি। শেষপর্যন্ত এদিন শাশুড়ি ও স্ত্রীর কাছে হাতেনাতে ধড়া পড়ে জুতোপেটা হতে হয় যুগলকে। সন্ধ্যার কথায়, ‘অনেক দিন থেকেই এই সম্পর্ক নিয়ে আমার মেয়ের সংসারে অশান্তি। জামাইকে আগে অনেকবার সতর্ক করে এবং বুঝিয়েও কাজ হয়নি। দুজনে এই চায়ের দোকানে সারাদিন কাটায় জেনে আমরা তক্কেতক্কে ছিলাম। দুজনকে ধরতে পেরে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।’
দুই পক্ষকে থানায় নিয়ে আসার পর ব্যক্তিগত মুচলেকার বিনিময়ে সতর্ক করে জামাইকে স্ত্রী ও শাশুড়ির হাতে তুলে দেয় পুলিশ। একইভাবে পরবর্তীতে ছেড়ে দেওয়া হয় তরুণীকেও। তবে মেয়ের সংসার বাঁচাতে সন্ধ্যার কাজে তাঁর পাশেই দাঁড়াচ্ছেন স্থানীয় মানুষজন।