পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: নজরদারির অভাবে ধুঁকছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যান্ড ফাইটোক্যামিক্যাল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি। সরকারি প্রতিষ্ঠানটির আজ এমন দুরবস্থা যে বছরে লক্ষ্যমাত্রা ১ লক্ষ লিটার থাকলেও এই মুহূর্তে মাত্র ৭ হাজার ১৫০ লিটারের বেশি ফিনাইল ও লিকুইড সোপ উৎপাদন করতে পারছে না। উত্তরবঙ্গের সমস্ত সরকারি হাসপাতালে ফিনাইল ও লিকুইড সোপ সরবরাহের একমাত্র বরাতপ্রাপ্ত সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশ নাম কুড়িয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। অথচ দেখভাল ও পরিকাঠামোর অভাবে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উৎপাদনের সম্ভাবনা প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দিনের পর দিন রুগ্ন অবস্থায় থাকায় এই সুযোগে বেসরকারি সংস্থার তৈরি সামগ্রী বাজার দখল করেছে। ফিনাইল ও লিকুইড সোপের বাইরে চা গাছ ও কৃষিকাজে গাছের বৃদ্ধিতে তৈরি জৈব হরমোন উৎপাদনেও পিছিয়ে পড়েছে এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। চাহিদা অনুযায়ী জোগান দিতে যেমন পারছে না, তেমনি কর্মীর অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে জলপাইগুড়ির তোড়লপাড়ার ফাইটো কমপ্লেক্স।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে উত্তরবঙ্গের শিল্প নিয়ে আলোচনা সভায় অংশ নেবেন। ওই আলোচনা সভাকে নিয়ে শিল্প মহলের উৎসাহ ও উদ্দীপনা তুঙ্গে। কিন্তু বাস্তবে খোদ জলপাইগুড়ির এক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বেহাল দশা কাটাতে রাজ্য সরকারের দিক থেকে গত কয়েক দশকে কোনও উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। প্রচুর সম্ভাবনা ও উপার্জনের দিক থাকলেও এই সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানটির অবস্থা এখন দাঁড়িয়েছে ঢালতরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দারের মতো। ফাইটো কমপ্লেক্সের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট সঞ্জিত গুহ বলেন, ‘সমস্যাটি যেখানে জানানো দরকার সেখানে জানিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’
আশির দশকে জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) তোড়লপাড়ায় রাজ্য শিল্প বাণিজ্য দপ্তরের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল ফাইটোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স। প্রায় ১ একর জমিতে অফিস ও ল্যাবরেটরি, স্টোর রুম তৈরি হয়। বাকি ৩২ একর জমিতে সীমানা প্রাচীর দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির ভেষজ রোপণ করা হয়েছিল। বর্তমানে ফাইটো কমপ্লেক্সে এখন বছরে মাত্র ৭৫০০ লিটার চা গাছের বৃদ্ধির জন্য গ্রোথ হরমোন তৈরি হয়। এছাড়া লিকুইড জেএম প্লাস ইডিটিএ মাত্র ২২০০ লিটার উৎপাদন করা হয় বছরে কৃষি সহ অন্যান্য গাছের বৃদ্ধির জন্য।
সরকারি এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত সামগ্রীর বিক্রি ও কর্মীর অভাব এবং উৎপাদিত সামগ্রীর চাহিদার সঙ্গে জোগানের অসামঞ্জস্যর কারণে সরকার লাভের মুখ দেখতে পারছে না। উৎপাদন বিভাগের গবেষণগারে প্রশিক্ষিত একজন কর্মী আগামী মাসে অবসর নিতে চলেছেন। তাঁর জায়গায় নতুন কাউকে না নিয়ে অন্য এক কর্মীকেই হাতে-কলমে শিখিয়ে পড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে প্যাকিং, প্যাকেজিং বিভাগে মাত্র ২ জন কর্মীকে দিয়ে কাজ করাতে সমস্যা হচ্ছে। প্রয়োজন ৭ জন কর্মীর। অস্থায়ীভাবে ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদে একজনকে ফাইটো কমপ্লেক্সের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিদিন অফিস করতে পারেন না অন্য দপ্তরের দায়িত্ব থাকায়। এতবড় ফাইটো কমপ্লেক্সে যেখানে ২৫ জন কর্মীর প্রয়োজন সেখানে স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মী মিলিয়ে মাত্র ৭ জনকে দিয়ে কাজ চলছে। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে উৎপাদিত সামগ্রী কিনতে ক্রেতাকে আগে থেকে টাকা দিয়ে বুক করতে হয়। কিন্তু তৎক্ষণাৎ সেই সামগ্রী হাতে পান না ক্রেতারা। কলকাতায় জানাতে হয়। সেখান থেকে বিল এলে তারপর সামগ্রী সরবরাহ করা সম্ভব হয়। ফলে লক্ষ লক্ষ টাকা কেউ তিন-চারদিনের জন্য সরকারের ঘরে কেনার জন্য ফেলে রাখতে চাইছেন না। ফলে বিক্রি কমছে। তাছাড়া বিপণনের প্রচার নেই। ফাইটো কমপ্লেক্সে কর্মীর অভাবে তাই ইতিমধ্যে জৈব কীটনাশক নিম তৈরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
কনসালটেটিভ কমিটি ফর টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘রাজ্যের এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চা গাছের বৃদ্ধির জন্য তৈরি করা গ্রোথ হরমোনের চাহিদা থাকলেও চেয়েও পাওয়া যায় না। শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি দ্রুত চাঙ্গা করে তোলা উচিত।’ নর্থবেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক কিশোর মারোদিয়ার কথায়, ‘সুযোগ পেলে মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প সম্মেলনে বিষয়টি তুলব।’