সুশান্ত ঘোষ, মালবাজার: চর্চায় আবার হনুমান। শনিবারই ধুমধাম করে পালিত হয়েছে হনুমান জয়ন্তী। আর তার পরের দিনই একটি পূর্ণবয়স্ক হনুমানকে ঘিরে তুলকালাম কাণ্ড জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) ডামডিমে। সেই সেবক থেকে ভিস্টাডোমের (Vistadome) ছাদে চেপে পাড়ি দিয়েছিল অনেকখানি পথ। তবে বিপত্তি বাঁধে ডামডিম স্টেশনে এসে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কামরার ছাদ থেকে ছিটকে পড়ে স্টেশনে। হইচই পড়ে যায়। উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান বনকর্মীরা। বর্তমানে বন দপ্তরের পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা চলছে তার।
রবিবার সকালে শিলিগুড়ির আকাশে তখন মেঘ-রোদের খেলা। আবহাওয়ার এই মেজাজ পরিবর্তনের মাঝেই সেবক স্টেশনে শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ারগামী ভিস্টাডোম ট্যুরিস্ট স্পেশাল ট্রেনের ছাদে উঠে বসে একটি পূর্ণবয়স্ক হনুমান। অংশুমান সিংহ তাঁর পরিবার নিয়ে সেই ট্রেনেই যাচ্ছিলেন ডুয়ার্সের পথে। তাঁর ছয় বছরের ছেলেই প্রথমে খেয়াল করে সেই হনুমানের কীর্তি। বাবাকে জানায়। আস্তে আস্তে খেয়াল করেন কামরার বাকি যাত্রীরাও। তবে সেসবে থোড়াই কেয়ার সেই হনুমানের! সে তখন বৃষ্টিভেজা ডুয়ার্সের প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতেই মগ্ন। এরই মধ্যে ঘটে বিপত্তি। ডামডিম স্টেশনের কাছাকাছি রেলের হাই ভোল্টেজ বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে আসে হনুমানটি। যন্ত্রণায় ঝুলে পড়ে ট্রেনের জানলায়। অংশুমানের কথায়, ‘আমার ছেলে দেখতে পেয়ে আমাদের জানায়। হঠাৎ করে হনুমানটি যে দুর্ঘটনার কবলে পড়বে, তা ভাবতেই পারিনি। প্রথমে আমার ছেলে মজা পাচ্ছিল। হনুমানকে কষ্ট পেতে দেখে ও কেঁদে ফেলে।’
ডামডিম স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালে হনুমানটি ছিটকে পড়ে স্টেশনে। সঙ্গে সঙ্গে লোকজন জড়ো হয়। কিন্তু শুশ্রুষার জন্য কাউকে কাছেই ঘেঁষতে দিচ্ছিল না সেই বুনো। স্টেশন কর্তৃপক্ষের তরফে বন দপ্তরকে জানানো হয়। মালবাজার ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াড-২’এর আধিকারিক অঙ্কন নন্দী বলেন, ‘খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। হনুমানটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। বর্তমানে হনুমানটি চিকিৎসা চলছে, সুস্থ হলেই তাকে বনে ছেড়ে দেয়া হবে।’
নিউ মাল জংশন জিআরপি’র ওসি অমৃত বর্মন বলেন, ‘ঘটনাটি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে আমরা বন দপ্তরকে খবর দিয়েছিলাম। বনকর্মীরা আসা পর্যন্ত হনুমানটিকে আগলে রেখেছিলাম।’
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, ডুয়ার্সে বাঁদরের উৎপাত তো বেড়েছেই। সেইসঙ্গে মাঝেমধ্যেই পূর্ণবয়স্ক হনুমানের দলও চলে আসছে শহর এবং শহরতলিতে। পশুপ্রেমী স্বরূপ বিশ্বাস ও তানিয়া হক জানালেন, ডুয়ার্সে বাঁদর দেখা গেলেও সেভাবে হনুমান দেখা যায় না।
সাধারণত বীরভূম, বাঁকুড়া, নদিয়ায় হনুমানদের আধিক্য বেশি। খাদ্যের অভাব দেখা দিলে তারা ট্রেন বা অন্য কোনও যানবাহনে চেপে চলে আসে। পর্যটকদের দেওয়া খাবারে তারা আকৃষ্ট হয়। তানিয়ার অনুমান, ‘খাবারের লোভেই হয়তো ট্রেনে চড়ে বসেছিল হনুমানটি। বন্যদের খাদ্যশৃঙ্খল সঠিক রাখার জন্য বন দপ্তরকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।’
অনেকটা একই সুর বন্যপ্রাণপ্রেমী দেবম ভৌমিক, রাজীব বিশ্বাস, সম্রাট হালদারদের। তাঁদের কথায়, যেভাবে লাগাতার বৃক্ষচ্ছেদন হচ্ছে, তাতেই খাবারের অভাবে বুনোদের এভাবে লোকালয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে।