সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি: মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরেও আম্রুত প্রকল্পের জল পৌঁছায়নি জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) পুর এলাকার সাধারণ মানুষের বাড়িতে। যদিও উদ্বোধনের পরই জল বাড়িতে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছিল পুর কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন উঠছে, উদ্বোধন কি কেবলই লোকদেখানো?
অধিকাংশ ওয়ার্ডে পানীয় জলের সমস্যা এখনও রয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, যে সমস্ত বাড়িতে পুরসভার পানীয় জলের সংযোগ রয়েছে সেখানকার ছাদে থাকা ট্যাংকে জল উঠছে না। এদিকে, আম্রুত প্রকল্পের কাজও এখনও অনেক জায়গায় বাকি। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে বাড়িতে জল পৌঁছাবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এবিষয়ে পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আম্রুত প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এবছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। আমরা তার মধ্যেই প্রায় ২৪ হাজার বাড়িতে জল পৌঁছে দেব। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর তিস্তার জল উত্তোলন কেন্দ্র থেকে সুকান্তনগরে জল পরিশোধনকেন্দ্র পর্যন্ত আমাদের ট্রায়াল রান চালু রয়েছে। এরপর আমরা জল পরিশোধনকেন্দ্র থেকে ওভারহেড ট্যাংকে জল পাঠানো এবং সেইসঙ্গে বাড়িতে জল সরবরাহ পরীক্ষামূলক শুরু করব।’
২০১৯ সালে জলপাইগুড়ি পুরসভায় আম্রুত জলপ্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়ার জন্য প্রায় ২০০ কিমি পাইপলাইন মাটির নীচে পাতার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শহরকে আটটি জোনে ভাগ করে প্রতিটি জোনে একটি করে ওভারহেড ট্যাংক তৈরি হয়েছে। তিস্তা সেতু সংলগ্ন বিবেকানন্দপল্লিতে নদীর মাঝখান থেকে জল তোলার পরিকাঠামো এবং সুকান্তনগর এলাকার জল পরিশোধনাগারের পরিকাঠামো তৈরি। কিন্তু জল পরিশোধনাগার থেকে আটটি জোনে থাকা ওভারহেড ট্যাংকে জল পাঠানোর জন্য পাইপ পাতার কাজ অনেক জায়গায় বাকি রয়েছে। ওভারহেড ট্যাংকে জল না আসার কারণে বাড়িতে জল পাঠাতে পারছে না পুরসভা।
এদিকে, প্রকল্পের কাজ শেষ না হতেই সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীর জলপাইগুড়ি সফরকালে তাঁর হাত দিয়ে আম্রুত জলপ্রকল্পের উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। আর এখানেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কাজ যেখানে অসম্পূর্ণ, সেখানে তড়িঘড়ি মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে উদ্বোধন কেন? শহরের প্রবীণ নাগরিক সুকান্ত সরকার বলেন, ‘যেভাবে জলপ্রকল্পের উদ্বোধন এবং প্রচার হয়েছিল, তাতে মনে হয়েছিল শীঘ্রই জল পেয়ে যাব। কিন্তু উদ্বোধনের পর প্রায় এক মাস হতে চলল, এখনও তো কিছুই হল না। বাড়িতে জলই এল না, আর প্রকল্পের উদ্বোধনের হয়ে গেল!’
বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করছেন বিরোধীরাও। পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলার অম্লান মুন্সি বলেন, ‘প্রথমত, আম্রুত জলপ্রকল্পের কাজ কেন নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হল না তার উত্তর কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। আর অসম্পূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন মুখ্যমন্ত্রী করেন কীভাবে? এ চমক আর মানুষকে প্রতারিত করা ছাড়া আর কিছুই নয়।’

