অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: সদ্য শনিবারই নারী দিবস উপলক্ষ্যে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) শহর সহ জেলাজুড়ে। অথচ সেই শহরের একেবারে লাগোয়া পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল এক তরুণীকে। অন্য কেউ নয়, নিজের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁর মেসেজ পেয়ে কাকতালীয়ভাবে নারী দিবসের দিনই তাঁকে উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি থানার পুলিশ। শনিবার থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের দায়িত্বেই ছিলেন সেই তরুণী। যদিও তিনি সাবালিকা, তবুও তাঁকে বাড়িতে ‘ফিরিয়ে নিয়ে যেতে’ রাজি হননি তাঁর বাবা।
কী ঘটেছিল? গত ৭ তারিখের ঘটনা। সেদিন কোতোয়ালি থানার পুলিশের মোবাইল নম্বরে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে মেসেজ আসে। সেই মেসেজে তরুণী নিজের পরিচয় দিয়ে অভিযোগ করেন যে, পরিবারের তরফে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে বাড়ির একটি ঘরে। পুলিশ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করে। বাড়ি থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
প্রশ্ন হল, মেয়েটিকে বাড়িতে আটকে রাখা হল কেন? থানা সূত্রে খবর, এর পিছনে রয়েছে সেই ভালোবাসার সম্পর্কের গল্প। এক তরুণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে সেই তরুণীর, যা তাঁর পরিবারের পছন্দ নয়। সেকারণেই এই ‘ফিল্মি’ পদক্ষেপ পরিবারের।
কোনও সাবালিকাকে কি এভাবে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখা যায়? আইনের দিক থেকে দেখলে, যায় না। তার ওপর সেই তরুণী উচ্চশিক্ষিত। তিনি নাগরাকাটার একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতাও করেন। বাড়িতে আটকে রাখার ফলে তিনি স্কুলেও যেতে পারছেন না। তবে কতদিন ধরে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। কারণ সেই তরুণী বা তাঁর পরিবারের কেউই সংবাদমাধ্যমের কাছে এসব নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। এড়িয়ে গিয়েছেন।
তবে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পর তরুণী জানিয়েছেন, মানসিকভাবে তিনি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন। যেহেতু তাঁকে কর্মক্ষেত্রেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না, তাই তিনি আরও ভেঙে পড়েছেন। পুলিশের কাছে তরুণীর কাতর অনুরোধ, তাঁকে যেন স্কুলে যেতে দেওয়া হয়। মেসেজ পাওয়ামাত্রই শনিবার মেয়েটির বাড়িতে টিম পাঠায় পুলিশ। মেয়েটিকে থানায় নিয়ে আসার পর, তাঁর বাবাও পুলিশের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তরুণী জানিয়েছেন, তাঁর বাবা স্কুলের শিক্ষক। একটি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে এমন ঘটনা ঘটায় অবাক পুলিশও। কোতোয়ালি থানার আধিকারিকরা চাইছেন, পারস্পরিক আলোচনা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে যাতে সমস্যা মেটে। সেই তরুণী আবার বাড়ি ফিরতে পারেন।
শনিবার মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার পর সেই রাতে তাঁকে রাখা হয়েছিল ওয়ান স্টপে। জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজে রয়েছে সেই ওয়ান স্টপ। কোনও নাবালিকা বা সাবালিকাকে পুলিশ উদ্ধার করার পর তাঁদের প্রাথমিকভাবে সেখানেই রাখা হয়। পরে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
কোতোয়ালি থানার পুলিশ জানিয়েছে, পুরো ঘটনা জলপাইগুড়ি জেলা দায়রা আদালতে জানানো হয়েছে৷ এছাড়াও ওই তরুণী যাতে শিক্ষকতা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন সেই বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।