অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি: বিতর্ককে সঙ্গী করেই শুক্রবার শুরু হচ্ছে জল্পেশমেলা (Jalpesh Mela)। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত মেলার আমন্ত্রণপত্র ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত। সরকারি অনুষ্ঠানকে দলীয় অনুষ্ঠানে পরিণত করার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে জেলা পরিষদ।
শিবরাত্রি (Shivratri) উপলক্ষ্যে উত্তরবঙ্গের (North Bengal) বৃহত্তম শৈবক্ষেত্র জল্পেশে ফি-বছর মেলা হয়। উদ্যোক্তা জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ। শুক্রবার মেলার উদ্বোধন করবেন রাজ্যের মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক। প্রধান অতিথি হিসাবে থাকার কথা শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেব ও শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী প্রমুখ। মেলা উপলক্ষ্যে জেলা পরিষদ থেকে যে আমন্ত্রণপত্র বিলি হয়েছে সেখানে জেলার বহু বিধায়কের নাম থাকলেও স্থানীয় বিধায়ক ও সাংসদের নাম নেই। তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। এপ্রসঙ্গে জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্তকুমার রায় বলেন, ‘ওখানে কোনওবারই আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। সরকারি অনুষ্ঠানকে দলীয় অনুষ্ঠানে পরিণত করে তৃণমূল।’ একই সুর ময়নাগুড়ির পদ্ম শিবিরের বিধায়ক কৌশিক রায়ের কণ্ঠেও।
শুধু বিরোধীই নয়, ক্ষোভ ছড়িয়েছে তৃণমূলের অন্দরেও। জল্পেশমেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তৃণমূল পরিচালিত ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতি। সেখানে তালিকায় সমিতির সভাপতি কুমুদরঞ্জন রায়ের নাম বাদ দিয়ে শুধুমাত্র পদের উল্লেখ রয়েছে। একইভাবে পদের উল্লেখ রয়েছে ময়নাগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান অনন্তদেব অধিকারীর। অথচ রয়েছে ভাইস চেয়ারম্যানের নাম। ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কিংবা সহ সভাপতির নাম না থাকলেও ওই পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শিবশংকর দত্তের নাম রয়েছে। বহু সরকারি পদাধিকারীর নামও কার্ডে উধাও। কিন্তু ময়নাগুড়ি টাউন ব্লক তৃণমূল সভাপতি গোবিন্দ পালের নাম ‘বিশিষ্ট সমাজসেবী’ হিসাবে রাখা হয়েছে। এব্যাপারে ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুমুদরঞ্জন রায় বলেন, ‘পুরোটাই সৌজন্য ও শিষ্টাচারের বিষয়। যাঁরা আমন্ত্রণপত্র তৈরির দায়িত্বে আছেন তাঁরা হয়তো আমার নাম জানেন না।’ মেলার ২৪ ঘণ্টা আগে আমন্ত্রণপত্র না মেলায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ময়নাগুড়ির পুর চেয়ারম্যান অনন্তদেব অধিকারী৷ তিনি বলেন, ‘যাঁরা জেলা পরিষদে আছেন তাঁরা জল্পেশমেলার কতটুকু জানেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ময়নাগুড়ির জেলা পরিষদের সদস্যদের ওখানে কোনও ভূমিকা নেই।’ এব্যাপারে সভাধিপতি কৃষ্ণা রায় বর্মন বলেন, ‘সবাইকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এনিয়ে বিতর্ক ঠিক নয়।’
শুক্রবার রাত থেকে মন্দিরে বিশেষ পুজো শুরু হবে। মেলায় সব দোকান সাজানো শেষ। বহু বছর পর এবার মেলায় সার্কাসের তাঁবু পড়েছে। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপত সহ অন্য কর্তারা মন্দির ও মেলা প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখেন। এবারই প্রথম মেলা চত্বরে পুলিশের তিনটি নজরমিনার করা হয়েছে। মেলার নিরাপত্তায় থাকছেন পাঁচজন ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিক, সাতজন ইনস্পেকটর সহ এসআই ও এএসআই পদমর্যাদার ৮৫ জন আধিকারিক। থাকছেন প্রায় তিনশো কনস্টেবল ও পাঁচশো সিভিক ভলান্টিয়ার।