উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘায়ুকে আশীর্বাদ বলে মনে করা হয়। কিন্তু ব্যতিক্রমী দেশ জাপান (Japan)। সেখানে দীর্ঘ জীবন অসহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রবীণদের কাছে। তাঁরা অনেকেই মনে করেন, নিঃসঙ্গ জীবনের চেয়ে জেলের ঘানি টানা ঢের ভালো।
জাপানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ প্রবীণ। প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের বয়স ৮০ বছর বা তারও বেশি। একাকিত্বের জ্বালায় এঁদের অধিকাংশের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আদৌ সুখে নেই উদীয়মান সূর্যের দেশের বুড়োবুড়িরা।
জাপানে ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনসংখ্যার সংকট আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে এক বৃদ্ধার কারাবাসের ঘটনায়। একাকিত্বের জ্বালা সইতে না পেরে চুরি করে জেলে গিয়েছেন ৮১ বছর বয়সি আকিয়ো নামের এক মহিলা (Japanese Woman)। তিনি জানিয়েছেন, অর্থসংকটে ভুগলেও চুরির ইচ্ছা তাঁর ছিল না। কিন্তু বহুকাল হল তাঁর ছেলে ছেড়ে গিয়েছেন তাঁকে। তিনি ভাবছিলেন, এমন নিশ্ছিদ্র নিঃসঙ্গতার মধ্য দিয়েই কি তাঁকে জীবনের বাকি দিনগুলি কাটাতে হবে! সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই চুরির পরিকল্পনা মাথায় আসে তাঁর।
দু’দশক আগে আকিয়োর বয়স তখন ছিল ষাটের কোঠায়। সেইসময় প্রথমবার খাবার চুরি করে তিনি জেলে যান। পরবর্তী সময়ে সামান্য পেনশনে জীবন চালানো কঠিন হয়ে গেলে তিনি আবার চুরির আশ্রয় নেন এবং শেষপর্যন্ত জাপানের বৃহত্তম মহিলা কারাগার তোচিগি উইমেন্স প্রিজন-এ ঠাঁই হয় তাঁর। তিনি বলেন, ‘চুরি করে জেলে যাওয়ার পর হীনম্মন্যতায় ভুগতাম। এটা তো আমার স্বভাব ছিল না। আবার এও বুঝেছিলাম ছিঁচকে চুরি করে বেশিদিন জেলে থাকতে পারব না। আমার আর্থিক অবস্থা ভালো হলে কখনই এ রাস্তায় পা বাড়াতাম না।’
শেষবার জেলে যাওয়ার আগে আকিয়ো থাকতেন তাঁর বছর তেতাল্লিশের ছেলের সঙ্গে। কিন্তু ছেলে সব সময় বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। যা মানসিকভাবে আর বহন করতে পারছিলেন না আকিয়ো। গত বছর অক্টোবরে কারামুক্তির পর লজ্জা ও একাকিত্ব গ্রাস করে তাঁকে। ছেলের কাছে যেতে না পারার দুঃখে কাতর প্রবীণা বলেন, ‘জানি না ছেলে আমাকে কেমনভাবে নেবে। এমন অবস্থায় পড়ে গিয়েছি, যা বলার নয়।’
কারাগারের দিনগুলির সুখের স্মৃতিচারণ করে আকিয়ো বলেন, ‘কারাগারে খুব ভালো মানুষ আছেন। আমি নিজের বাড়ির চেয়ে এখানে বেশি নিরাপদ।’
তোচিগি উইমেন্স প্রিজনের আধিকারিক তাকায়োশি শিরানাগা জানান, বাড়িতে একা একা চুপি চুপি মরে যাওয়ার চেয়ে কারাগারে বন্দিদশা অনেক বয়স্ক মানুষের কাছেই খুব কাঙ্ক্ষিত ব্যাপার। এমনকি কারাগারে থাকতে দেওয়ার বিনিময়ে প্রতি মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১১,২০০ থেকে ১৬,৮০০ টাকা) খরচ করতেও রাজি অনেকে।