কাশ্মীরে উত্তরবঙ্গ সংবাদ
বিশ্বজিৎ সাহা, শ্রীনগর: কী কারণে হামলা আর কীভাবে ভবিষ্যৎ চলবে সেটাই এখন ভূস্বর্গের (J&K) বাসিন্দাদের কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পহলগামের হামলার (Pahalgam Terror Attack) পর ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এই সমস্ত প্রশ্নের ওপর থেকে ধোঁয়াশা সরার কোনও লক্ষণই নেই। পাশাপাশি, যাঁরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ ছড়ানো শুরু করেছে।
মহম্মদ মুস্তাক শ্রীনগর (Srinagar) সংলগ্ন গোন্ডারওয়ালের বাসিন্দা। ২০০৭ সাল থেকে পর্যটকদের নিয়ে প্রতি মাসেই চার-পাঁচবার পহলগাম যান। জঙ্গিহানার পর এতটাই মর্মাহত যে খাবার গলা দিয়ে প্রায় নামছেই না। কী কারণে এই হামলা আর নিজের কাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক ভেবেছেন। কোনও কূলকিনারা পাননি। পর্যটনের মরশুম শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত পহলগামে সেনাবাহিনীর দু–তিনটি নাকা চেকপোস্ট ছিল। পর্যটনের মরশুম শুরুর পর কী কারণে সেই চেকপোস্ট তুলে নেওয়া হল বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া আকিব মনজুরের প্রশ্ন। পড়াশোনার ফাঁকে সংসার চালাতে আকিব ডাল লেকে শিকারা চালান। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি শুনে আকিব প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, ‘পহলগামের ভিউপয়েন্টে যাওয়ার আগে যে সমস্ত চেকপোস্ট ছিল সেগুলি কেন তুলে নেওয়া হল সেটা খুঁজে বের করুন।’
শ্রীনগরের বাসিন্দা মহম্মদ আসলাম পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে তিন মাস আগে ৪০ হাজার টাকার মাসিক কিস্তিতে ৪০ লাখ টাকার একটি গাড়ি কিনেছিলেন। জঙ্গিহানার পর থেকে পর্যটকরা ভূস্বর্গ ছাড়তে শুরু করায় তাঁর চোখে জল। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে গাড়ির মাসিক কিস্তির টাকা জোগাড় হবে আর কীভাবেই বা সংসার চলবে, আসলাম কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না। আকিবের মতো তাঁরও প্রশ্ন, ‘শ্রীনগরে কয়েক মিটার দূরে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে সেনা, আধাসেনা ও পুলিশকর্মীরা রয়েছেন। শ্রীনগরের বাইরের প্রত্যন্ত ভিউপয়েন্টগুলিতে কেন কোনও নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন না?’
মধ্য চল্লিশের মুস্তাক আহমেদ বিমানবন্দরের পাশেই থাকেন। পেশায় ফোটোগ্রাফার। শ্রীনগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ট্যুরিস্ট স্পটে আসা পর্যটকদের কাশ্মীরি পোশাক পরিয়ে ছবি তুলে সংসার চালান। কী কারণে পহলগামের ঘটনাটি ঘটল বলে প্রশ্ন করায় উত্তর এল, ‘গত ৩৫ বছরে কাশ্মীরে অনেক গণ্ডগোল হয়েছে। কিন্তু কোনও সময় পর্যটকদের ওপর হামলা হয়নি। তাই যাঁরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদেরই প্রশ্নটা করা ভালো।’ গোটা ঘটনার পেছনে নোংরা রাজনীতি রয়েছে বলেই তাঁর মত। শ্রীনগরের শালিমারবাগের উলটোদিকে ফয়জল ওয়াসিমদের বহু পুরোনো পারিবারিক হোটেল। বহু বাঙালি পর্যটকের তাঁর হোটেলে আনাগোনা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ফয়জল বাংলাটা বেশ কিছুটা রপ্ত করে ফেলেছেন। তিনিও নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ, ‘যাঁরা সীমান্তের পাহারায় রয়েছেন, তাঁদের ফাঁকি দিয়ে জঙ্গিরা কী করে এলাকায় এল তা তাঁরাই ভালো করে বলতে পারবেন।’
হারুন রশিদ, আবেদ মনোয়ার ও আসিফ রশিদ জম্মু-কাশ্মীরের ভূমি রাজস্ব দপ্তরে কাজ করেন। বৃহস্পতিবার টিফিনের সময় তুলমুল্লায় শ্রী মাতা ক্ষীরভবানী মন্দিরের সামনে একটি চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এদিনই শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১৭০০ জন কাশ্মীর ছাড়েন। তাঁদের সিংহভাগই পর্যটক। সীমান্তে এত কড়াকড়ি সত্ত্বেও পহলগামের ঘটনাটি আবেদরা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। হারুন বললেন, ‘গোটা কাশ্মীর মর্মাহত। বুধবারের স্বতঃস্ফূর্ত বনধই তার প্রমাণ।’ অচিরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলাকা আবার পর্যটকে ভরে যাবে, আসিফরা এমনটাই মনেপ্রাণে চাইছেন।