সেনাউল হক, কালিয়াচক: দুষ্কৃতীদের অত্যাচার লাগামছাড়া হয়েছে। এতটাই যে পরিবারের সবাইকে নিয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতে এক ব্যবসায়ী জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অনুমতি চাইলেন। রাহিম বিশ্বাস নামে ওই ব্যবসায়ী কালিয়াচক থানার জালালপুর পঞ্চায়েতের ফতেখানি গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা তাঁর কাছে কয়েক লক্ষ টাকা দাবি করেছে। সেই টাকা না দিলে তাঁকে খুন করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে কালিয়াচক থানায় অভিযোগ জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে ওই ব্যবসায়ীর দাবি। ১৭ জুন পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানালেও কোনও ফল হয়নি বলেও অভিযোগ। হতাশায় ওই ব্যবসায়ী জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্ত্রী, দুই নাবালক ছেলে ও এক নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণের অনুমতি চেয়েছেন।
রাহিম বললেন, ‘দুষ্কৃতীরা সমানে হুমকি দিচ্ছে। আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে থাকতে ভয় পাচ্ছে। দুষ্কৃতীদের অত্যাচার আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে আমি গোটা পরিবার নিয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জেলা শাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারের কাছে কুরিয়ার করে এই আবেদনপত্রগুলি পাঠানো হয়েছে।’ রবিবার বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব সাড়া না দেওয়ায় তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি। জেলা শাসক নীতিন সিংহানিয়া বললেন, ‘স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণের অনুমতি চেয়ে কোনও আবেদনপত্র এখনও আমার কাছে আসেনি। যদি এমন কোনও আবেদন আসে তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
২০২২ সালে ঘটনার সূত্রপাত। রাহিম সেই সময় জালালপুর স্ট্যান্ড এলাকায় একটি কাপড়ের শোরুম খুলেছিলেন। সেই সময় থেকেই দুষ্কৃতীদের নজর তাঁর দিকে বলে অভিযোগ। মাঝেমধ্যেই ওই ব্যবসায়ীর কাছে টাকা দাবি করা হত। রাহিম বেশ কয়েকবার তাদের টাকাও দেন। পরে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে সেই বছরের জুন মাসে তাঁকে অপহরণ করা হয়। সবকিছু জানিয়ে রাহিমের স্ত্রী কালিয়াচক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ওই ব্যবসায়ীকে পরে মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করে। এই ঘটনায় জহুরুল খান সহ তার দলবলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয় এবং ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জেল খাটার পর ধৃতরা বাড়ি ফিরে আসে। মামলা তুলে নিতে এরপর থেকে রাহিমকে সমানে চাপ দেওয়া শুরু হয় বলে অভিযোগ।
রাহিম জানান, ১৪ জুন সন্ধ্যা নাগাদ জহুরুল সহ বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী তাঁকে ঘিরে ধরে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পাশাপাশি, অপহরণের মামলা তুলে নিতে তাঁকে চাপ দেওয়া শুরু হয়। কোনওমতে সেখান থেকে পালিয়ে রাহিম কালিয়াচক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু কালিয়াচক থানার পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না করায় তিনি পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হন। রাহিমের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা শাসকদলের ছত্রছায়ায় থাকায় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত জহুরুল বললেন, ‘রাহিমের এক খুড়তুতো ভাই তাঁর স্ত্রীকে মারধর করায় সালিশি সভা বসেছিল। রাহিম সেই সভায় ভাইয়ের স্ত্রীর পক্ষের সদস্যদের মারতে শুরু করেন। বারণ করা হলেও শোনেননি। যাঁরা রাহিমের হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন তাঁরাই তাঁকে মারধর করেন। পরে রাহিমের ভাইয়ের স্ত্রীর পক্ষের সদস্যরা ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কালিয়াচক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সবকিছু ধামাচাপা দিতে এখন নাটক করা হচ্ছে।’