উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ কালীগঞ্জে নাবালিকা হত্যার ঘটনায় আরও দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। শুক্রবার রাতে বর্ধমানের কাটোয়া থেকে এই দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কালীগঞ্জের ঘটনায় সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তারির সংখ্যা দাঁড়াল ৯। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন মূল অভিযুক্ত গাওয়াল শেখ এবং তাঁর পুত্র বিমল শেখ। মৃতার পরিবারের দাবি, ধৃত গাওয়ালের নির্দেশেই সেদিন বোমা ছুড়ে ছিল দুষ্কৃতীরা। গাওয়ালই তমান্না হত্যার ‘মূল মাথা’।
কালীগঞ্জে তমন্না হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হল মূল অভিযুক্ত গাওয়াল শেখ ও তার পুত্র বিমল শেখ। গত ১৯ জুন কালীগঞ্জে বিধানসভার উপনির্বাচন ছিল। সোমবার, ২৩ তারিখ ছিল ভোটগণনা। কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে জয় নিশ্চিত হতেই কালীগঞ্জে বিজয় মিছিল বের করে তৃণমূল। তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে ছোড়া বোমার আঘাতে প্রাণ গিয়েছিল ১০ বছরের নাবালিকা তমন্না খাতুনের। এই ঘটনার পরেই এলাকা ছেড়ে বেপাত্তা হয়ে যায় ধৃত গাওয়াল শেখ ও তাঁর পুত্র বিমল। মৃতার মা সাবিনা বিবি দাবি করেছিলেন, গাওয়ালই বোমা ছোড়ার নির্দেশ দেন। তিনিই ‘মূল মাথা’।
কে এই গাওয়াল শেখ? জানা গিয়েছে, গাওয়াল কালীগঞ্জে তৃণমূলের বুথ সভাপতির পদে আছেন। তমান্নার মৃত্যুর পর পরিবারের তরফে যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল, তাতে গাওয়াল এবং তাঁর পুত্র উভয়েরই নাম ছিল। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার অমরনাথ কে বলেছেন, ‘‘কালীগঞ্জ বোমাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত গাওয়াল শেখ। তাঁকে বর্ধমানের কাটোয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও এক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখনও আরও কিছু অভিযুক্ত পলাতক। তাঁদের খোঁজেও নিরবচ্ছিন্ন ভাবে তল্লাশি অভিযান চলছে। শীঘ্রই সকল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।’’
শনিবার গাওয়ালের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর শুনে মৃতার মা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘‘গাওয়াল এই ঘটনার মূল মাথা। ওর নির্দেশে বোমা হামলা হয়েছে। তবে ওর উপরেও মাথা আছে, পুলিশ সেটাও তদন্ত করে দেখুক। ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুলিশ সব জানতে পারবে।’’
বুথ সভাপতির গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের কোনও দল হয় না। কে কোন দলের সমর্থক, দেখার দরকার নেই। যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে, তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুক পুলিশ। দলীয় ভাবে আমরা সেই দাবি জানাচ্ছি।’’ কৃষ্ণনগর নদিয়া উত্তরের বিজেপির সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস বলেন, ‘‘বড় মাথাদের আড়াল করতে চুনোপুঁটিদের বলি দেওয়া হচ্ছে। যারা এত দিন ধরে গোটা এলাকাকে সন্ত্রস্ত করে রাখল, ভোটে যাদের তৃণমূল ব্যবহার করল, সেই মস্তানবাহিনীর শিকড় পর্যন্ত পৌঁছোনোর ক্ষমতা পুলিশের নেই। তবুও এই গ্রেফতারি মানুষকে কিছুটা ভয়মুক্ত করবে।’’
এলাকার সিপিএম নেতা এসএম সাদি পুলিশকে একহাত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ আগে থেকেই সব জানত। তারাই দুষ্কৃতীদের ‘সেফ প্যাসেজ’ দিয়ে রেখেছিল। শনিবার আমাদের প্রতিবাদ সভা আছে। ক্ষুব্ধ মানুষের জমায়েত আছে। পুলিশ ভয় পেয়ে কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করছে। এসব নাটক চলবে না। এলাকার প্রত্যেক তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করতে হবে।’’