কালিয়াগঞ্জ: জলপাইগুড়ির পর এবার কালিয়াগঞ্জ। কিছুদিন আগে অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া মেটানোর ক্ষমতা না থাকায় মায়ের দেহ কাঁধে নিয়ে রওয়ানা হয়েছিলেন ছেলে। জলপাইগুড়ির সেই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা রাজ্যকে। এবার কালিয়াগঞ্জে চার মাসের সন্তানের মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া দেওয়ার মতো ক্ষমতা ছিল না বাবার। হাতজোড় করে অনুরোধ করলেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজের সুপারও। অগত্যা মৃত সন্তানকে কাপড়ে মুড়িয়ে কালো ব্যাগে পুরে শনিবার গোটা রাত রাস্তাতেই কাটিয়ে দিলেন কালিয়াগঞ্জের অসীম দেবশর্মা। রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ ব্যাগে করে মৃত সন্তানকে নিয়ে একটি বেসরকারি বাসে চেপে শিলিগুড়ি থেকে কালিয়াগঞ্জে পৌঁছোন তিনি।
কালিয়াগঞ্জ ব্লকের মোস্তাফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙ্গি পাড়া এলাকার বাসিন্দা অসীম দেবশর্মা। এদিন তিনি কালিয়াগঞ্জ বিবেকানন্দ পুর বাসস্ট্যান্ডে নেমে বলেন, ‘হায়রে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা! আমার মতো অন্য কোনও গরিব পরিবারের সঙ্গে ভবিষ্যতে যেন এমন না হয়। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ চত্বরে দালালরাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রীকে লিখিতভাবে অভিযোগ করব।’
ঘটনার খবর কানে যেতেই কালিয়াগঞ্জ বিজেপির শহর মণ্ডল সভাপতি গৌরাঙ্গ দাস অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে হাজির হন। এদিন দুপুরে বাসস্ট্যান্ড থেকে ব্যাগে থাকা মৃত সন্তানকে নিয়ে অসীম নিজের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। গৌরাঙ্গ দাস বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে একজন বাবাকে তাঁর মৃত সন্তানের দেহ ব্যাগবন্দি করে নিয়ে আসতে হচ্ছে। আর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এদিকে ভাইজানকে ফিশ ফ্রাই খাওয়াচ্ছেন। আমরা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার পূর্ণ তদন্ত চাই। না হলে আগামী দিনে রাজ্যের বেহাল স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সামনে রেখে উত্তরবঙ্গব্যাপী আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব আমরা।’
বাম আমলের পরে তৃণমূল আমলেও কিছু কিছু জায়গায় দালালরাজ চলছে বলে কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন কালিয়াগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সৌমেন রায়। তাঁর বক্তব্য, ‘দুঃখজনক ঘটনা। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি চাইছি আমি।’
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ঠিক এমনই একটি ঘটনার ছবি ধরা পড়েছিল জলপাইগুড়িতে। শবযানে দেহ নিয়ে যেতে গেলে লাগত তিন হাজার টাকা। অগত্যা টাকা জোগাড় করতে না পেরে মায়ের শবদেহ চাদরে পেঁচিয়ে কাঁধে তুলেই শ্মশানের উদ্দেশে হেঁটে রওনা দিয়েছিলেন ছেলে। সঙ্গ দিয়েছিলেন অসহায় বৃদ্ধ বাবা। শোকসন্তপ পুত্রের কাঁধে মায়ের নিথর দেহ। মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার এই করুন ছবি নাড়া দিয়েছিল অনেককেই। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়েও প্রশ্ন উঠছিল। এবার আবারও একই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন রাজ্যবাসী।