গাজোলঃ আম মালদা জেলার আবেগ। গোটা দেশে আমের কথা বললেই উঠে আসে মালদার নাম। ফজলি, হিমসাগর, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ এইরকম বিভিন্ন প্রজাতির আম কয়েক দিনের মধ্যেই দখল করবে বাজার। মূলত বছরের এই একটা সময়ই আম পাওয়া যায় মালদা জেলায়। তবে ব্যতিক্রম ঘটিয়েছেন পান্ডুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ফুলবাড়ি গ্রামের আম চাষি রাজীব রাজবংশী। এক বিঘা জমিতে তিনি লাগিয়েছেন প্রায় শ’খানেক কাটিমন আম গাছ। এই গাছের বিশেষত্ব সারা বছরই আম পাওয়া যায় এই গাছগুলিতে। আর এই প্রজাতির আম চাষ করে স্বনির্ভরতার দিশা দেখাচ্ছেন অন্যান্য আম চাষীদের।
বারোমাসিয়া নতুন প্রজাতির কাটিমন আম চাষ সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাজীব জানালেন, বাংলাদেশের একটি ভিডিওতে ২০২০ সালে এই আমগাছ দেখেছিলেন তিনি। বাংলাদেশে এই চাষ সফল হলে মালদাতেও যে সফল হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন। তাই সেই সময় থেকেই এই আম চাষে উদ্যোগী হয়েছিলেন তিনি। রাজীব আরও জানালেন, বারোমাসি আম বলতে যা বোঝায়, কাটিমন কিন্তু তার থেকে আলাদা। বারোমাসি আমে দেখা গেছে মূলত বছরে দু’বার আম ধরে। কিন্তু কাটিমনের ক্ষেত্রে বছরের প্রায় সবদিনই গাছে আম পাওয়া যায়। একদিনও গাছ ফাঁকা থাকার ব্যাপার নেই। অর্থাৎ আম বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছের বাকি জায়গায় মুকুল আসতে শুরু করে। এই মকুল থেকে দানা হয়ে আম বড় হতে শুরু করলে আবার মুকুল আসে অন্য ডালে। এইভাবেই একটি গাছে পরপর আম ফলতে থাকে। বছরের সবসময় এভাবেই চলতে থাকে। গাছ লাগানোর দু’বছরের মধ্যেই গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছিল। যদিও গাছগুলি তখন খুব ছোট থাকায় তিনি আম নেননি। তবে গত বছর থেকে বড় মাপের গাছগুলি থেকে আম নিতে শুরু করেছেন। মুকুল ধরার পর আম পরিপক্ক হতে সময় লাগে প্রায় প্রায় সাড়ে ৩ মাস। আমের সাইজও বেশ বড় মাপের হয়। একটু বড় সাইজের তিনটি আমে এক কেজি হয়ে যায়। আর সাইজ ছোট হলে চার-পাঁচটিতে এক কেজি হয়।
এই প্রজাতির আম গাছের পরিচর্যা কিভাবে করতে হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে রাজীব জানালেন, গাছের পরিচর্যা করতে বছরে দু’বার গোবর সার দিতে হয়। বৃষ্টির সময় ছত্রাকনাশক এবং রোগ অনুযায়ী কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। তবে নতুন পাতা আসার সময় কীটনাশক একটু বেশি দরকার হয়। এই আমের স্বাদ কি অন্যান্য আমের মতো, নাকি একটু আলাদা? এই বিষয়ে রাজীব বলেন, কাটিমন আমে প্রচুর পরিমাণে শাঁস থাকে। আমের গুঠি খুবই ছোট এবং পাতলা। আম্রপালির মতো মিষ্টি। সুগন্ধ অনেকটা লক্ষণভোগ আমের মতো। রাজীবের আশা, এবার ভালই দাম পাওয়া যাবে। গতবার শীতের সময় পাইকারি ৬০ টাকা কেজি দরে আম বিক্রি করেছিলাম। আমের মরসুমেও মনে হচ্ছে বেশ ভালোই দাম পাব।
জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের আধিকারিক সামন্ত লায়েক জানান, ‘নিজের উদ্যোগে বারোমাসি কাটিমন আমের চাষ শুরু করেছেন পান্ডুয়ার রাজীব রাজবংশী। নিজের উদ্যোগে এই প্রজাতির আম চাষ শুরু করেছেন। খুব ভাল উদ্যোগ। আম চাষিরা অসময়ের এই প্রজাতির আমের ভাল দামও পাবেন। আমরা রাজীব বাবুর আমবাগান পরিদর্শনে যাব।’